নিজস্ব প্রতিবেদক: খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম উপজেলা থানচিতে খাগড়াছড়ির গুইমারা ও জালিয়াপাড়ায়সহ বিভিন্ন উপজেলায়, রাঙ্গামাটির বরকল, জুরাইছড়ি ও কাপ্তাইসহ প্রত্যান্ত অঞ্চলে এখন আতঙ্কের নাম ম্যালেরিয়া। বর্ষা শুরু সাথে সাথে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়া ফলে উপজেলাতে দিনদিন বাড়ছে ম্যালেরিয়ায় প্রাদুর্ভাব। এতে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে দ্বিগুণ। দুর্গম এলাকাগুলোতে কোন যাতায়াত ব্যবস্থা ও মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এর ফলে রোগীরা পাচ্ছেন না জরুরি চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ। যার কারণে সেসব দুর্গম গ্রামগুলোতে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে ম্যালেরিয়া রোগে।
জানা গেছে, বর্ষাকাল শুরুর আগেই দুর্গম এলাকায় দেখা দিয়েছে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব। এতে বেশিরভাগই আক্রান্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। তাছাড়া গ্রামগুলোতে যাতায়াতে একমাত্র মাধ্যম নৌকা। যার ফলে নানা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেসব গ্রামের লোকজন। শুধু তাই নয়, প্রান্তিক গ্রামগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে সেসব গ্রামে পৌঁছাতে পারছে না ওষুধপাতি। ফলে গ্রামে গ্রামে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অনেকেই।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ি আঙ্গিনায় কিংবা ঝোপঝাড়ে মশার উপদ্রব যেন বেড়ে চলেছে। রাতে মশারি ব্যবহার করা গেলেও সেটির ভিতরে এসে মশার আক্রমণের রেহাই নেই। তাছাড়া সেসব দুর্গম এলাকার মানুষজন জুম চাষের উপর নির্ভরশীল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, থানচি উপজেলা ৪টি ইউনিয়নের রেমাক্রি, সদর, তিন্দু ও বলিপাড়া প্রায় ৬৬টির অধিক গ্রামগুলোকে ম্যালেরিয়া হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তার মধ্যে সদর ইউনিয়নের-নাইদারী, বিদ্যামনি, বুধখাই, চুমি, চাং ইয়াং, মুইখই, মিয়া অইং, বোডিং, বুল্লুম, আম অই, চিংথোয়াই অং পাড়া। রেমাক্রী ইউনিয়নের- আদা, অংখো সাবাই, মতিস চন্দ্র পাড়া। বলি পাড়া ইউনিয়নের- নাইখং, সতিসচন্দ্র, কেচু পাড়া ও তিন্দুতে বড় মদ, ছোট মদসহ আরো কয়েকটি গ্রামে রয়েছে ম্যালেরিয়া রোগের সংখ্যা। বাড়িঘর জঙ্গলের পাশে হওয়াতে সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে মশার আক্রমণ। অবুঝ শিশুরা না বোঝার কারণে মশার আক্রমণে প্রথমে হালকা জ্বর অতপর কাঁপুনি জ্বরে বেহুশ হয়ে যায়। তবে বেশ কয়েকটি গ্রামগুলোতে এখনো পৌঁছেনি চিকিৎসা সেবা। যার কারণে রোগে ভুগতে হচ্ছে সেসব চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত গ্রামগুলো।
তবে ম্যালেরিয়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী। ঔষদপত্র দিয়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালিদের সহযোগিতা করছে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
থানচি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার দেওয়া তথ্য মতে, জুন-জুলাই দুই মাসে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১ শিক্ষার্থী ও জুম ঘরে চিকিৎসার অভাবে আরও ১ জন। ২৪ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেমাক্রী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের খ্যাইসাপ্রু পাড়া নিবাসী অজমনি ত্রিপুরা মেয়ে প্রীতি ত্রিপুরা ১৬, ২ জুলাই একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চাইশৈউ পাড়া নিবাসী মংহ্লাচিং মারমার মেয়ে উম্যাচিং মারমা (৮) ও সর্বশেষ ১০ জুলাই সোমবার চিকিৎসা নিতে এসে পথে মারা যান কাইথেন পাড়া বাসিন্দা ইফকাই ম্রো ছেলে লেংরাই নামে নয় বছরে শিশু। এছাড়াও বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১২ জন।
ম্যালেরিয়া রোগী নাইন্দারী পাড়ার প্রধান চাইশৈপ্রু মারমাসহ অনান্য গ্রামে কারবারিরা জানান, বিভিন্ন গ্রামে এখন ম্যালেরিয়া আক্রন্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগই কোনলমতি শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। ম্যালেরিয়া হলে বুঝা যায় কত কষ্ট! পুরো শরীর কাঁপে, ঘুমানো যায়না। তবে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা সেবা পেলে ভালো থাকবেন বলে আশা করছেন তারা।
থানচি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগের আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। যার ফলে ৪টি ইউনিয়নের মোট ৬৬টি গ্রামকে ম্যালেরিয়া জোন হিসবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব গ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ ও ব্র্যাকের সমন্বয়ে চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছি। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। ম্যালেরিয়া রোগীকে অবশ্যই স্যালাইনের মাধ্যমে ইনজেকশানের চিকিৎসা করতে সুযোগ পেলে রোগীকে সুস্থ করার সম্ভব। তাই সবাইকে সচেতন থাকার করা জন্য আহ্বান জানান তিনি।