নিজস্ব প্রতিবেদক:: খাগড়াছড়িতে উচ্চ শিক্ষার জন্য কৃষি কলেজ, নার্সিং কলেজ এবং একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা। একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মঙ্গলবার (১৩ জুন ২০২৩) খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা বলেন, ‘রাঙামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে, বান্দরবানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, কিন্তু খাগড়াছড়িতে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য এমন কোনো সুযোগ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন খাগড়াছড়িতে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা করে দেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে নার্সিং কলেজের প্রয়োজন আছে, কৃষি কলেজের প্রয়োজন আছে। খাগড়াছড়িতে যেন প্রধানমন্ত্রী একটি কৃষি কলেজ এবং একটি নার্সিং কলেজ করে দিয়ে সারাদেশের উন্নয়নের স্রোতধারা সাথে মেশার একটি সুযোগ করে দেন।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সদস্যদের আয়কর মুক্ত থাকার প্রসঙ্গে এমপি বলেন, ’আমরা দীর্ঘদিন ধরে ট্যাক্স ফ্রি ছিলাম, এখন আইন সংশোধন হতে যাচ্ছে, সেখানে যেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের ট্যাক্সের আওতায় না আনা হয়। ব্রিটিশ আমলে, পাকিস্তান আমলে এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশেও আমরা ট্যাক্সের আওতায় ছিলাম না, এবারো যেন আমরা ট্যাক্সের আওতায় না পড়ি, এই দাবিটা আমি সংসদে উপস্থাপন করছি।’
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু যেহেতু দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল, তাই ১৫-২০ বছরে সমতলের মতো সম উন্নয়ন হবে, সেটা সম্ভব না। কারণ, সেখানে এখনো অনেক উন্নয়ন হওয়ার বাকি রয়েছে। যেখানে আগামী ১৫-২০ বছরে বিদ্যুৎ যাবে না, পার্বত্য চট্টগ্রামের সেসব স্থানে সোলার প্যানেল বিতরণের মাধ্যমে আলোকিত করা হয়েছে। কিছুদিন আগে যখন সারাদেশে এক সঙ্গে ১০০টি ব্রিজ উদ্বোধন করা হলো, সেখানে আমার খাগড়াছড়িতেই ৪২টি ব্রিজ উদ্বোধন করা হয়েছে। এর জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই। খাগড়াছড়িতে আরো যেসব ব্রিজ-কালভার্ট আছে, আশা করি সেগুলোও ধীরে ধীরে হবে।’
শান্তি চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কখনো কোনো কাজে হ্যাঁ বলেছে, এটা আমরা শুনি নাই। শান্তি চুক্তির সময়ও তারা হ্যাঁ বলেনি। দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাহানি ছিল। বিএনপিসহ আরো যারা আগে ক্ষমতায়ছিল তারা এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছে। কিন্তু তারা কোনো আস্থা তৈরি করতে পারেনি। পার্বত্যবাসীর প্রতি তাদের কোনো মায়া, ভালোবাসা, প্রেম ছিল না বলেই তাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শান্তি চু্ক্িত করেছেন। তিনি নির্বাচনের আগে কথা দিয়েছিলেন, যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে শান্তি চুক্তি করে সমস্যার সমাধান করবেন। তিনি সেই কথা রেখেছেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ভাতৃঘাতী সংঘাত ছিলো সেটা বন্ধ করেছেন। তখন থেকে বাংলাদেশের সমতলের উন্নয়নের স্রোতধারার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামও একই ধারায় এগিয়ে চলেছে।’
এমপি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। পার্বত্যবাসী পশ্চাদপদ ছিল, তারা নির্যাতিত ছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি অনুধাবন করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা দেশের এক দশমাংশ। সেখানে যারা বসবাস করে তারাও মানুষ। তাদেরকেও জাতীয় উন্নয়নের স্রোতধারার সাথে শামিল করা প্রয়োজন। সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি শান্তি চুক্তি করেছেন। সেই শান্তি চুক্তি যেন না হতে পারে সে জন্য বিএনপি তখন লং মার্চ করেছিল, নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আত্মার সম্পর্ক এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ মনে করে জননেত্রী তাদের মা, সেই বিশ্বাস থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অথচ, বিএনপি বলেছিল, শান্তি চুক্তি হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো বাঙালি থাকতে পারবে না। শান্তি চুক্তি হলে সেখানে কোনো মসজিদে আজান শোনা যাবে না, শঙ্খ-কাশর ঘণ্টা শোনা যাবে। বাঙালিরা সেখানে থাকতে পারবে না, গুচ্ছগ্রাম বন্ধ হয়ে যাবে। এসব মিথ্যা বানোয়াট বক্তব্য দিয়ে তারা শান্তি চুক্তিকে বানচাল করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি তার একমাত্র কারণ হলো জননেত্রী শেখ হাসিনার অন্তরে পার্বত্যবাসীর প্রতি দরদ ছিল, মায়া ছিল, প্রেম ছিল, মানবতা ছিল।’