নিজস্ব প্রতিবেদক: খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নে ব্যাপক হারে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েদের নোটারি পাবলিক এর মাধ্যমে অল্প বয়সে গোপনে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিনিয়ত। প্রশাসন বাল্যবিবাহ নিয়ে বিভিন্ন সময় জেল জরিমানা করলেও থামছে এই অপসংস্কৃতি। এতে ছোট ছোট কোমলমতি মেয়েদের জীবনের ঝুকিঁ বাড়ছে।
জানা যায়, গত ২৮ মে ২০২৩ গুইমারা উপজেলার বড়পিলাক নামক এলাকার আব্দুস ছালাম এর মেয়ে সাইমা আক্তারকে অল্প বষসে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও প্রশাসন ঘটনাস্থলে গেলে মেয়ের পরিবার সূত্রে বলে, “গত ৪ থেকে ৫ মাসে আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম, ‘বর্তমানে মেয়েকে ছেলে পক্ষের নিকট উঠিয়ে দিচ্ছে।” মেয়ের বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে বার বার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখলে বেড়িয়ে আসে আসল তথ্য যেখানে উল্লেখ আছে, মেয়ের বষয় ১৬ বছর দশ মাস ১৪দিন (জন্ম নিবন্ধন নম্বার ২০০৬৪৬১৮০৩৮০১৬৮৩০) এবং মেয়ে সবে মাত্র ৮ম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণিতে উর্ত্তিণ হয়েছে।
স্থানীয় কাজী আব্দুস ছালাম এর সাথে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রতিটা সচেতন ব্যক্তি এবং প্রশাসনের কর্তব্য। র্দীঘ ২ থেকে ৩ বছরে গুইমারা উপজেলায় এবং পাতাছড়া ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ৮০টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। ঘটনার বিবরণে তিনি আরো বলেন, এসকল বিবাহ স্থানীয় কাজীর মাধ্যমে না করিয়ে বয়স কম হওয়া মোটা অংকের টাকা দিয়ে অন্যান্য স্থানের কাজীদের কাছে এবং নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ করানো হয়। মূলত অভিভাবকদের যোগসাজসে ছেলে মেয়েকে কোর্টে পাঠিয়ে জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডির জন্ম সাল পরিবর্তন করে বিবাহ পড়ানো হয়। এর সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা জুরুরী।
অন্যদিকে রামগড় উপজেলার মাহবুব নগর এলাকায় আ. রহমান এর মেয়ে মায়মুনা আক্তারকে মাত্র ১৩ বছর ১ মাস ২৩ দিন (জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০০৯৪৬১৮০৫৭৭১৪৮৫০) বয়সেই বিবাহ দেয় একই স্থানের ইদ্রিস আলীর ছেলে মো: সোহেল এর সাথে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলে দাবি করেন স্থানী গন্যমান্য বক্তি ও স্থানীয় কাজী।
গত ২৮ মে ২০২৩ বড়পিলাক বাল্যবিবাহকে কেন্দ্র করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাসিনা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “বাল্যবিবাহ হচ্ছে শুনে ঘটনাস্থালে গিয়েছিলাম তখন মেয়ের বাবা যে জন্ম নিবন্ধন দেখিয়েছে তাতে মেয়ের বয়স ১৯বছর ছিল, ‘তখন স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় যাচাই করা সম্ভব হয়নি।”
সচেতন মহল দাবি করেন, “যেপরিমানে দিনের পর দিন বাল্যবিবাহ বেড়েছে এমন চলতে থাকলে ছোট ছোট কোমলমতি মেয়েদের জীবনের ঝুকিঁ বাড়তে থাকবে। সমাজে সৃষ্টি হবে অবক্ষয়। এসব বাল্যবিবাহের সাথে ছেলে মেয়েদের অভিভাবকদের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত রয়েছে। তাই বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসনের কঠোর প্রদক্ষেপ গ্রহণের এবং ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া বাল্যবিবাহ তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।”