নিজস্ব প্রতিবেদক:: পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে নিহত হওয়ার পর একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার অংশ হিসেবে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের রঞ্জিতপাড়া এবং শিবারেগাতে বর্তমানে সন্ত্রাসীদের নিত্য দিনের আড্ডাখানায় পরিনিত হয়েছে। শিবারেগা এলাকায় পরিত্যক্ত পুলিশ ক্যাম্পের জায়গাটিতে বিভিন্ন কলাকৌশলে তারা দু-একর জায়গা দখল করে নিয়েছে নিজেদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম করে। এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন চাঁদাবাজদের আখড়া আর সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য। প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ এবং প্রাণনাশের ঘটনা ঘটছে। সাধারণ পাহাড়ি-বাঙ্গালী থেকে চাঁদা উত্তোলন করে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারই বাস্তব প্রমাণ মিলে গত সোমবার ৮ মে, ২০২৩ বিকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়িতে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নিহত সন্ত্রাসীরা হলেন- নেমথাং বম এবং গণলাইনে কাজ করা হোন্ডা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও বাজার/রসদ সরবরাহকারী লাল লিয়ান ও সশস্ত্র চাঁদা কালেক্টর সিম লিয়ান। এরা সকলেই বোম সম্প্রদায় ভুক্ত। আর বোমদের সকল তরুণ প্রজন্মই কেএনএফ এর সাথে যুক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রাম-কে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড হইতে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের অপপ্রয়াসে লিপ্ত সশস্ত্র সংগ্রাম করা ‘কেএনএফ’ এর সঙ্গেও এদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইখ্যং পাড়ায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ডেমোক্রেটিক ) কিংবা মগ নিবারেশন পার্টি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএফ) দু’টি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, “নিহত তিন জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানে অস্থিতিশীল তৈরি করা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নিহতরা
স্থানীয়দের মধ্যে ডেবিট বম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী আরো জানান, “নেমথাং বম, লাল লিয়ান ও সিম লিয়ান দীর্ঘদিন ধরে অত্র এলাকায় কেএনএফ সোর্স, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুমসহ নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার জুলুম করে আসছিল। তাদের হয়ে রুমা বাজারে ও বর্ডার রোড প্রজেক্টের ঠিকাদারীদের কাছ থেকে চাঁদা কালেকশন করতেও দেখা গেছে বলে জানা যায়।
এছাড়াও স্থানীয়রা ও প্রশাসন সূত্রে আরো জানা যায়, নিহত সন্ত্রাসীদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষ করার পর কেউ নিতে আসেনি। তাই লাশ মর্গে দীর্ঘক্ষণ রেখে দেয়া হয়। নিহতরা কেএনএফ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই মামলার ভয়ে কেউ লাশ নিতে আসেনি এটা সুস্পষ্ট। নিহত সন্ত্রাসীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পরবর্তীতে পাড়া হেডম্যানের নিকট লাশ পৌছানো হয়।
অন্যদিকে লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের রঞ্জিতপাড়া এবং শিবারেগাতে বর্তমানে সন্ত্রাসীদের নিত্য দিনের আড্ডাখানায় পরিনিত হয়েছে। শিবারেগা এলাকায় পরিত্যক্ত পুলিশ ক্যাম্পের জায়গাটিতে বিভিন্ন কলাকৌশলে তারা দু-একর জায়গা দখল করে নিয়েছে নিজেদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম করে, যেখানে চলে সন্ত্রাসীদের মিটিং মিছিল, যার নেতৃত্বে বিনয় প্রশাদ কারবারী, নতুনা চাকমা ও তোপন জ্যোতি চাকমা। বর্তমানে তারা যে জায়গাটি দখল করতে চাচ্ছে সে জায়গাটিতে এখনো পুলিশ ক্যাম্পের স্থাপিত টিউবওয়েল রয়েছে, যার পানি তারা পান করছে।
এছাড়াও ক্যাম্পের মাঠে নামে মাত্র স্কুল তৈরী করে, হেলিপেটের জায়গা দখল করে নিচ্ছে, ক্যাম্পের মাঠটি নিজেদের খেলার মাঠ বলে দখল করে রেখেছে, এছাড়াও সরকারী জায়গার বিভিন্ন ফল ফলাদির গাছ কর্তন করে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় ক্যাম্পের জায়গা দখল করে বিভিন্ন ভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে এলাকার শান্তি সম্প্রীতি নষ্ট করার পায়তারা করছে, যেকোন সময় উক্ত এলাকায় বড় ধরনের রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী, ‘যেহেতু শিবারেগা এলাকাটি চিহ্নিত একটি সন্ত্রাসী এলাকা, সেহেতু খুব দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেকোন একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হোক।’ ‘এখানে যারা চিহ্নিত সন্ত্রাস তারাই প্রকাশ্যে বিভিন্ন দপ্তরের তদবীর চালাচ্ছে ক্যাম্প না হওয়ার জন্য।’ ‘তাই সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে জরুরি ভিত্তিতে ক্যাম্প স্থাপন করা দরকার।