ডেস্ক নিউজ:: ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে সেখানে পাহাড়ের উপরে ও পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে তাদের চিহ্নিত করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সেই লক্ষ্যে রোহিঙ্গা শিবিরের নিকটবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে উত্তাল রয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সৈকতের বালিয়াড়িতে দেওয়া হয়েছে লাল পতাকা। রোহিঙ্গা সহ উপকূলবর্তী লোকজনের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া, নগদ টাকা, খাবার মজুদ, মেডিকেল টিম ও উদ্ধারকর্মীসহ সহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া উপকূলে ফিরেছে প্রায় ৩ হাজার মাছ ধরার ট্রলার। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব এখনো ঝড়-বৃষ্টি সৃষ্ট না হলেও চলছে দাবদাহ। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সব ধরণের প্রস্তুতি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কক্সবাজার বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সকল প্রস্তুতি। সকল উপজেলার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার উপকূলীয় এলাকার সকল সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয় সহ ৫৭৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বরাদ্ব রয়েছে ২০ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৫৯০ মেট্টিক টন চাল, ৭ মেট্টিক টন শুকনো খাবার, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুদ রাখা হয়েছে। জরুরী মুহুর্তে সেবা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে মেডিকেল টিম, ফায়ারসার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবকসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এছাড়া আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এবারের ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আশংকা থাকায় এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরানো, খাবার নিশ্চিতসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার সামছুদ্দৌজা নয়ন জানান, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে সেখানে পাহাড়ের উপরে ও পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে তাদের চিহ্নিত করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সেই লক্ষ্যে রোহিঙ্গা শিবিরের নিকটবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগে সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রস্তুতি নিয়েছে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক, রেডক্রিসেন্টসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, পুলিশ সেখানে সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা পরিস্থিতিতে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলার। এরই মধ্যে ফিরেছে প্রায় ৩ হাজার ট্রলার। কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, যে ট্রলারগুলো এখনো সাগরে মাছ শিকার করছে তাদের উপকূলে ফিরে আসতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার উপকূলে নোঙর করেছে প্রায় ৩ হাজার ট্রলার। এখনো সাগরে আছে ২ হাজারের মতো ট্রলার।
বিলাইছড়িতে মোখা মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা
বিলাইছেিড় আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখা ( মোকা) মোকাবেলার লক্ষে বিলাইছড়ি উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার ( ১২ মে) সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের আয়োজনে অত্র পরিষদের কনফারেন্স রুমে এক সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান – এর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীমতী উৎপলা চাকমা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সহকারী সার্জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ দেলোয়ার হোসেন, ওয়ারেন্ট অফিসার ৩২বীর বিলাইছড়ি জোনের প্রতিনিধি মোঃ মাহতাব হোসেন, থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনিরুজ্জামান, ১ নং বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শামসুদ্দিন,এলজিইডি কর্মকর্তা মোঃ আলতাফ হোসেন এবং অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধি বৃন্দ,রেডক্রিসেন্টের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, সভায় আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত থেকে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপজেলায় কর্মরত সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটিসহ সকল ছুটি বাতিল করা হবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
বিলাইছড়ি উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ পাড়ার বাসিন্দাদের দুর্যোগময় মুহুর্তে আগেই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো অবস্থানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি,উপজেলার কয়েকটি ভবন সহ প্রতিটি প্রাইমারি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলায় একটি কন্ট্রোলরুম খুলতে বলা হয়,কুইক রেসপন্স টিম গঠন,এ ছাড়াও উপজেলা প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগ,প্রকল্প বিভাগ,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল,বিদ্যুৎ বিভাগ,রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সহ সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানা যায়।