শিরোনাম
মঙ্গল. ডিসে ২৪, ২০২৪


নিজস্ব প্রতিবেদক:: খাগড়াছড়িতে প্রভাবশালীদের প্রভাবে পাহাড় কাটার মহাৎসব চলছে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলা। পাহাড়ে ঘেরা এই জনপদে সম্প্রতি পাহাড়ের মাটি কাটায় জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকটি চক্র। গুইমারা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাহাড় কেটে বিক্রয়ে মেতে উঠেছে প্রভাবশীলী মহলটি। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও জরিমানা করা সত্ত্বেও থামছে না পাহাড়ের মাটি কাটার মহাৎসব ।

গত ছয় মাসে ছোট-বড় অন্তত ১০০টি পাহাড়ের একাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পুকুর ও আবাদি জমি ভরাট উন্নয়ন ও রাস্তা নির্মাণের নামে এসব পাহাড় ও টিলা কেটে নেওয়া হচ্ছে।

পাহাড় কাটার এমন কয়েকটি ঘটনায় সাবেক ও বর্তমান একাধিক জনপ্রতিনিধির নাম উঠে আসে। তবে তাঁরা উন্নয়নের দোহাই দিয়ে এবং নিজের প্রয়োজনের কথা বলে দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিল, ডাইনছড়ি, বাটনাতলী, তিনটহরী, গোদাতলী, বড়ডলু, মুসলিমপাড়া ও এয়াতলংপাড়ায় গিয়ে অবাধে পাহাড় কাটার ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, রাস্তা নির্মাণের নামে এসব পাহাড় কাটা হয়। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খননযন্ত্র (ড্রেজার) এবং শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কেটে নিচ্ছেন। তবে শ্রমিকেরা জড়িত কারও নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জেলার মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি, দীঘিনালা, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, পানছড়িতে চলছে অসব পাহাড় কাটা। সরকারি নিদের্শ অমান্য করে একাধারে পাহাড় কাটলেও প্রশাসনের নেই কোনো নজর দারি। পাহাড় কাটা ছাড়াও চলছে একের পর এক অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন। একাধিকবার জাতিয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।

২৮শে ফেব্রুয়ারী থেকে গুইমারা সরকারি মডেল স্কুলের পাহাড় কেটে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি গাড়ি পনেরশত টাকা থেকে দুই হাজার টাকায়। জানা যায়, একটি অবৈধ পাহাড় কর্তনকারী চক্ররা স্কুলের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে। রাতের অধারে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। একটি পাহাড় খেকো চক্র প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় কাটছে। সম্প্রতি গুইমারা আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের পাহাড় কাটা বন্ধের জন্য সহযোগিতা কারার আহ্বান করলেও এখনো বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ধারা ৬ এর (খ) স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারী বা আধাসরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না।

গুইমারা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে যে পাহাড়টি আছে তা কেটে শহিদ মিনার ও বিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানায় বিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ কিন্তু তা না করে রাতের আধারে মাটি কেটে বাহিরে পাহাড় খেকো ও দুষ্ট চক্রের মাধ্যমে বিক্রয়ে মেতে উঠেছে।

এই বিষয়ে গুইমারা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলু হোসেন সাথে বিদ্যালয়ের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রয়ের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঢাকা ছিলাম। কিভাবে মাটি বিক্রয় করেছে তা জানি না। তবে কারা এর সাথে জড়িত সবাইকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।

সম্প্রতি কাপ্তাই লেকের সরকারি খাস জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে দোকানপাট ঘর বাড়ি নির্মাণের কাজে সহযোগিতা করার জন্য মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ করলেও এখনো বহাল তবিয়তে বিদ্যমান রয়েছে। কেন এর সুরহা মেলেনি সেই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘রাস্তা উন্নয়নের সুযোগে মাটি ব্যবসায়ীরা সক্রিয়। রাস্তা সংস্কারের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে পাহাড় বা টিলা থেকে কাটা মাটি তাঁরা নিয়ে যান।

এসকল অবৈধ পাহাড় কাটা সংক্রান্ত বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার’রা কিছু কিছু জায়গায় জেল জরিমানা করলেও বন্ধ হচ্ছে না এসব অবৈধ কাজ।

সম্প্রতি গুইমারা আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী বলেন, পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। পাহাড় কাটলে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে বলেন অবৈধ ভাবে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজে সহযোগিতা করতে হবে। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!