শিরোনাম
বুধ. ডিসে ২৫, ২০২৪

কনকনে শীতেও কোমর তাঁত বুননে ব্যস্ত পাহাড়ি নারীরা

নুরুল আলম:: কোমর তাঁতে স্বাবলম্বী হচ্ছে পাহাড়ি নারীরা। তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ে ১১টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস, এসব গোষ্ঠীর নারী সদস্যরা প্রায় সবাই কম-বেশি কোমর তাঁত বোনেন। নারীরা বাঁশের কাঠি দিয়ে বিশেষ কায়দায় কোমরের সঙ্গে বেঁধে তাঁতের কাপড় বুনে থাকে বলে এটিকে কোমর তাঁত বলা হয়।

পাহাড়ি নারীদের হাতে তৈরি থামি, পিনন, ওড়না, রুমাল, গামছা বা চাদর এখন পাহাড় ছাড়িয়ে সমতলেও ব্যাপক সমাদৃত। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য এ শিল্প এখনও বাড়ির উঠানেই আটকে আছে। তবে তারা বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিছু কিছু এলাকায় তাঁত বোর্ডের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করলেও সেই ঋণের ঘানি টানতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ শিল্পকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোমর তাঁতে ঘুরছে পাহাড়ি নারীদের জীবন চাকাও।

পাহাড়ি তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজাতীয় নারীরা বাঁশের কাঠি দিয়ে কোমরের সঙ্গে বেঁধে তৈরি করেন থামি, ওড়না, রুমাল, গামছা ও চাদর। এই তাঁতের কাপড়গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পার্বত্য তিন জেলায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। পর্যটকরা ফিরে যাওয়ার সময় স্মৃতি হিসেবে পাহাড়ি নারীদের তৈরি এই কোমরতাঁত কিনে সঙ্গে নিয়ে যান।

তাঁত বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তাঁত শিল্প বিকাশে অবদান রাখছে। এ শিল্পটি দেশে বস্ত্র উৎপাদনেও প্রায় ৬৩ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। তবে তাঁতিদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দিলেও পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়কে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাঁত বুননের প্রশিক্ষণ বা বুনন কাজের জন্য যুগোপযোগী যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে না।

এক কোমর তাঁত বুননকারী ব্যক্তির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা কোমরতাঁত বুননের কাজটি মা-বোনদের কাছে শিখেছি। পার্বত্য তিন জেলায় সরকারিভাবে তাঁত বুনন কাজের যদি ট্রেনিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে দেওয়া হতো, তাহলে আমরা আরও বেশি অভিজ্ঞ হতে পারতাম।

সরেজমিনে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি, গুইমারা সহ বিভিন্ন উপজেলার মেয়েরা শীতের সকালে কোমর তাতঁ বুননে লেগে আছে। তৈরি করা এসব পোষক খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গিয়ে বিভিন্ন দোকনে বিক্রয় করা হয়। এটি পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। এই কোমর তাত থেকে আয় করা টাকা দিয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল ভরণপোষন করে থাকেন।

সম্প্রতি তাঁত বোর্ড বেসিক সেন্টারের কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়ের ৯০ শতাংশ নারী কোমরতাঁত বোনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইতোমধ্যে দাঁতভু থেকে ৬১০ জন নারীকে ২ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। অফিসে একমাত্র আমিই কর্মরত আছি। পাহাড়ে কোমরতাঁত বুনন কাজে সংশ্লিষ্টদের সরকারি সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!