নিজস্ব প্রতিবেদক:: অবৈধ ভাবে কাঠ বোঝাই ট্রাকের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়ের একাবাকা সড়ককার্লবাড, ব্রিজ । অতিরিক্ত কাঠ বোঝাই ট্রাক একই সময়ে ব্রীজ দিয়ে যাতায়াতের ফলে ব্রীজ সহ সড়কের ক্ষতি হয় বলে মনে করেন সচেতন মহল।
স্থানীয়দের তথ্য মতে জানা যায়, চোরা কাঠ পাচারকারী অবৈধভাবে সরকারী আইন ভঙ্গ করে কাঠ পাচার করে আসছে প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে। আর এ কাজে সরাসরি জড়িত প্রশাসনের কিছু কতিপয় ব্যক্তি এবং বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকার্তা। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে চক্রটি। কাঠ পাচারকারীরা সেগুন, গামারিসহ নানান প্রজাতির গাছ কেটে পাহাড় নেড়া করে ফেলছে। স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক সহ পরিবেশবাদীরা রহস্যজনক ভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারার হাতিমুড়া, সিন্দুকছড়ি, হাফছড়ি, কালাপানি, বড়পিলাক, জালিয়াপাড়া, মানিকছড়ি তিনট্যহরী, গচ্চাবিল, জামতলা, বড়ডলু, গাড়িটানা, লেমুয়া, রামগড় পাতাছড়া, নাকাপা, থলিবাড়ি, কালাডেবা, গর্জনতলী, মাস্টারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রাতের আধাঁরে প্রশাসনের নিরব ভূমিকাকে ব্যবহার করে অবাধে পাচার হচ্ছে জ¦ালানি কাঠ। এসব জ্বালানি কাঠ বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায় পাচার হয় বলে জানা যায়। এসকল অবৈধ জ্বালানি কাঠ পাচারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে সচেতন নাগরিক। অনুরুপ ভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাচার হচ্ছে রদ্দাকাঠ। এসকল কাঠ পার্বত্যাঞ্চলের বাহিরে সমতলে পাচার করা হয়। এই বিষয়ে প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।
হাইকোর্টের নিদের্শনা অমান্য করে খাগড়াছড়ি জেলার ৮টি উপজেলায় ইটের ভাটায় অবৈধ ভাবে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে ইট তৈরি কাজ চালছে। এতে ব্যবহার হচ্ছে সংরক্ষিত বনের কচিঁকাঁচা কাঠ। এধরনের অবৈধ কর্মকান্ড প্রশাসরেন সম্মুখি করা হচ্ছে বলে দাবি সচেতন মহলের। এসব পাচারকারী চক্র মানুষের রের্কডীয় এবং সরকারি খাস জায়গার মূল্যবান সেগুন, গামারি, চাপালিশ, আকাশিসহ বিভিন্ন মূল্যবান গাছ কাটার ফলে স্থানীয় বিরোধকৃত জায়গার গাছ প্রভাব বিস্তার করে কেটে নিতে গেলে সৃষ্টি হয় মারামাটি দাঙ্গা হাঙ্গামা।
কাঠ পাচারকারী ব্যবসায়ী সমিতি বলছে তারা অবৈধ কাঠের গাড়ি থেকে যে টাকা উত্তোলন করেন তা সড়ক সংস্কারের জন্য এবং সমিতির জন্য। সড়ক সংস্কারের নাম করে অবৈধ কাঠের গাড়ি হতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিটি কাঠ-লাকড়ি বোঝাই গাড়ি হতে ১ হাজার ২ শত টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। এ চাঁদাবাজির অবৈধ টাকা ২০/২১ টি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ আরো কিছু দপ্তর ব্যক্তি ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলেও জানা যায়।
অবৈধ কাঠ পাচারকারীরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাল্লা দিয়ে যেতে গিয়ে একাধিক কাঠ বোঝাই ট্রাক ব্রিজে উঠে। তাছাড়া অতিরিক্ত কাঠ বোঝাইয়ের ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সড়ক গুলোর বেহাল দশার মূল কারণ অবৈধভাবে অতিরিক্ত কাঠ বোঝাই গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চলাচল। সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হল; সড়ক সংস্কারের দায়িত্ব কি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির? তারা কেন ১ থেকে দেড় শত টাকার সড়ক সংস্কারের নামে চাঁদার টোকেনে উল্লেখ্য করে? ১হাজার ২শত থেকে ২হাজার টাকা গাড়ি প্রতি নিয়ে এক থেকে দেড় শত টাকা চাঁদার টোকেনে উল্লেখ করা হয়। যে টাকা তারা সড়ক সংস্কারের নামে নেন সে গুলো দিয়ে তো তাদের কোন সড়ক সংস্কার করতে দেখা যায় না। চাঁদাবাজীর টাকা বৈধ করতে সড়ক সংস্কারের দোহাই দেওয়া হয় চাঁদার টোকেনে। নতুন একটি সড়ক নির্মাণ হলে বছর ঘুরে আসার আগে কাঠ পাচারকারীরা সে সড়কের বেহাল দশা করে। ৫ মেট্রিকটন বোঝাই করার অনুমতি থাকলেও ৩০ থেকে ৩৫ মন বোঝাই করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ সহ এলজিইডির নজর নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল। এছাড়াও সড়ক সংস্কারের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে যে টাকা উত্তোলন করা হয় তারও হিসাব নেওয়া উচিত। অবৈধভাবে কাঠ পাচার কাজে সহযোগীতা করার কারণে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি গুলোর রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করা প্রয়োজন। এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে উপজাতি-বাঙালি সকলের ঐকবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবী।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষা করতে হলে অবৈধভাবে কাঠ পাচার বন্ধ রাখতে হবে এবং সহজশর্তে কাঠ ব্যবসা চালু করতে হবে। যাতে পরিবেশেরও ক্ষতি না হয় এবং গরীব মানুষ জীবিকার তাগিদে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে। বন বিভাগ, আনসার ভিডিপি, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন ও কিছু ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের লাভের জন্য সমগ্র পার্বত্যবাসীর ক্ষতি করা কোন মতে কাম্য হতে পারে না। পাহাড় হতে কাঠের জন্য যে চাঁদা উত্তোলন করা হয় এই চাঁদাবাজির টাকা পাহাড় ছেড়ে সমতলেও যায়। এই ব্যবসার সাথে জড়িতরা যতটা লাভবান হয় তার থেকে বেশি লাভবান হয় সুযোগ সন্ধানী ও সিন্ডিকেট গ্রুপ সহ উপজাতি সন্ত্রাসীরা।
শুধু খাগড়াছড়ি দীঘিনালা নয় সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের এই চিত্র বিদ্যমান। প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে অবৈধভাবে কাঠ পাচার করা হয়। কিছু কাঠের পারমিট থাকলেও এই পারমিটের কাগজ দিয়ে বিভিন্ন বাগান হতে গাছ কেটে পাহাড় নেড়া করা হয়। অবৈধভাবে পারমিট ব্যবহার করা হয়। একটি পারমিটের কাগজ অনেক দিন ব্যবহার করা হয়, এক পারমিট দিয়ে একাধিক বাগানের গাছ কাটাও হয়। বন বিভাগ পারমিট দিলেও ব্যবসায়ীরা পারমিট সঠিকভাবে ব্যবহার করছে কিনা তা নিয়ে বন বিভাগের বিন্দুমাত্র তদারকি নেই। এছাড়াও পারমিটের কাগজে যে কাঠ উল্লেখ আছে তার থেকে অধিক কাঠ বোঝাই করে সমতলে পাচার হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ কাঠের গাড়ি আটক করলেও পারমিটের কাগজপত্র না বুঝতে পারার কারণে আটক কাঠ ভর্তি গাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কে কোন পারমিটের বাগান হতে গাছ কাটছে তাঁরও তদারকি নেই। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অবৈধভাবে কাঠ পাচারে জড়িত।
বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা অবৈধ কাঠ পাচারের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি কাঠের গাড়ি হতে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে চাঁদা নিয়ে অবাধে পারমিটবিহীন কাঠ পাচারে সুযোগ দেন। অবৈধভাবে কাঠ পাচার হলে তার থেকে চাঁদা নিতে পারে বন বিভাগ। আর পারমিট দিলে চাহিদা অনুযায়ী পকেট ভরা যায় না। তাই চাহিদা মত পকেটে ভরতে অবৈধভাবে কাঠ পাচার করছে। স্থানীয় কিছু কতিপয় ব্যবসায়ীর কারণে অনেক গরীব ব্যবসায়ীরা কাঠ ব্যবসা করতে পারছে না। কারণ গরীব ব্যবসায়ীদের কাঠের গাড়ি আটক করে অবৈধ পাচার হিসেবে। আর যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীও কাঠ ব্যবসা সমিতির মাধ্যমে লিয়াজো করে তাদের শুধুমাত্র ব্যবসা করতে দেয়া হয় সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়।
ইটভাটার জ্বালানির, ফার্নিচার আবাসপত্র ও সমতলে কাঠ পাচারের জন্য পাহাড় হতে সেগুন, গামারি গাছ কেটে পাহাড় নেড়া করা হয়। সরকার কর্তৃক পরিবেশের ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক রক্ষার জন্য গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের এই আদেশ অমান্য করে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, কতিপয় প্রশাসন, বন বিভাগ ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যে কাঠ পাচার করছে তার ব্যাপারে বর্ণিত মহল কোথায়? মানিকছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা উহলামং চৌধুরী বলেন, নিরাপত্তার ও লোকবলের অভাবের কারনে রাতের আঁধারে চোরা পথে অবৈধ ভাবে যে কাঠ পাচার করা হয় সেগুলো রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব অবৈধ কাঠ পাচার রোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অবৈধ কাঠ পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে জালিয়াপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা অনুকর চাকমা বলেন, অবৈধ কাঠ জালিয়াপাড়া এলাকা থেকে পার হয়না। তবে জানা যায়, অন্যান্য পথধরে কাঠ পাচার হয়।
রামগড় রেঞ্জকর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার সীমানা দিয়ে রাতের অন্ধাকারে জ¦ালানি ও গোলকাঠ অবৈধ ভাবে পাচার হচ্ছে না। কিন্তু বিকল্প পথে নাকাপা দিয়ে ডুকে বাগানবাজার হয়ে সমতলে এসব কাঠ পাচার করা হয় বলে লোকমুখে শুনলেও নিরাপত্তা ও লোকবলের অভাবে করার কিছুই থাকে না।