নিজস্ব প্রতিবেদক:: খাগড়াছড়িতে এক পাহাড়ির জায়গার উপর নির্মিত একটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়ে, অন্য একটি ঘর ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করাসহ ফলজ বাগান কাটার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় দুস্কৃতিকারীরা সিমানা পিলার উত্তোলন ও তারকাটার নিয়ে যায়। খাগড়াছড়ি জেলা সদরের উত্তর সবুজবাগ (অনন্ত মাষ্টার) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত জসিম,সাহাদাত,রাজ্জাক,শাহিন,রঞ্জু মিয়া,আল-আমিন,সালা উদ্দিনসহ আরো অজ্ঞাত নামা ব্যাক্তিদের আটকের দাবী জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ জায়গার মালিক জ্যোতিষ জ্ঞান চাকমা। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলেও এ সময় তিনি জানান। এদিকে- চাঁদাদাবী ও অগ্নিযোগের ঘটনায় অভিযুক্ত জসিম,সাহাদাত এর সাথে অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, এ ধরনের ঘটনার সাথে তারা জড়িত নয় বলে অভিযোগ অস্বীকার করেন।
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আরিফুর রহমান বলেন, উল্লেখিত বিষয়ে থানার কেউ লিখিত অভিযোগ করেনী। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। জানা যায়, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের পেরাছড়া মৌজাস্থ ১২ নম্বর এলাকায় (বিজিবি সেক্টর হেডকোয়ার্টারের পাশে) ঐ পাহাড়ি গ্রামবাসীর সৃজিত মিশ্র ফলজ বাগানের বিভিন্ন ফলজ গাছ করার সুবাধে দীর্ঘ দিন করে চক্রটি মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবী করে আসছে।
চক্রটি চাঁদা না পেয়ে গতকাল রবিবার গভীর রাতে ( ১৪ নভেম্বর ২০২২ সোমবার) ঐ জায়গায় প্রবেশ করে বাগানের জন্য সৃজন করা গাছগুলো কেটে ধ্বংস করে দেয়। একই সাথে বাগানের নির্মিত খামার ঘরে অগ্নিসংযোগ ও আরেকটি ঘর ভাংচুর করে। এতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেছে ক্ষতিগ্রস্থ মালিক জ্যোতিষ জ্ঞান চাকমা। তিনি ঘটনার সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার পূর্বক ক্ষতিপুরণ দাবী করেন। একই সাথে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান।
তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, গতকাল রবিবার (১৩ নভেম্বর ২০২২) রাতে সেটলাররা বাগানের একটি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও আরেকটি ঘর ভাংচুর করে টিনের বেড়া কেটে নষ্ট করে দিয়েছে বলে বাগান মালিকরা জানান। বাগানের মালিক জ্যোতিষ জ্ঞান চাকমা জানান, অনেক আগ থেকে খাগড়াছড়ি পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের উত্তর সবুজবাগের ০১. মো. শাহিন (৪৫), পিতা-নেল ফকির, ০২. মো. রনজু (৪৫), পিতা-আবুল হাশেম, ০৩. আব্দুর রাজ্জাক, পিতা-চান মিয়া, ০৪. আল আমিন (৩০), পিতা-আব্দুর রাজ্জাক সহ অজ্ঞাতনামা ০৭/০৮ জন আমার বাগানে ক্ষতির চেষ্টা করছিলো। এ নিয়ে আমি থানায় লিখিত ভাবে জানিয়েছি।
তারাই গতকাল বাগানের পরিকল্পিতভাবে প্রবেশ করে এ ঘটনা ঘটনায়। গত ১২ নভেম্বরও আমি খাগড়াছড়ি সদর থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ দাখিল করলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার রাতে তারা বাগানে নির্মিত একটি ঘর আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে এবং আরেকটি ঘরে ভাঙচুর ও ঘরের টিনের বেড়াগুলো কেটে নষ্ট করে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এর আগে গত ২/৩ মাস পূর্ব হতে একই ওয়ার্ডের কুমিল্লা টিলার মো. জসিম আমার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ২৭ অক্টোবর ২০২২ আমার দখলীয় জায়গাটি তার দাবি করে আমার বাগানে জঙ্গল কাটা শুরু করে। আমি তাদেরকে বাধা দিলে আমাকে সেদিন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। উক্ত ঘটনার পর আমি গত ২৯ অক্টোবর ২০২২ খাগড়াছড়ি সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করেছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনায় সেটলাররা বাগানে বেড়ার জন্য ব্যবহৃত ১০০টি পিলার, বেড়ার ১৭টি জি আই তারের নেট খুলে নিয়ে গেছে। এছাড়া বাগানে রোপন করা ৫০০ টি সুপারি চারা, ৫০০টি পেঁপে গাছ, ৯ প্রজাতির ৩০০টি কলা গাছ, ৫০০টি সিটলেস লেবু গাছ কেটে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। পাশাপাশি বাগান রক্ষার্থে খাগড়াছড়ি সদর থানায় পর পর দু’টি অভিযোগ দায়ের করার করলেও তাদের এখনো গ্রেপ্তার করেনি বলে তিনি জানান। একই সাথে বাগান ধ্বংসের ক্ষতিপূরণসহ নিরাপত্তা ও বাগান রক্ষার্থে অবিলম্বে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।