শিরোনাম
মঙ্গল. ডিসে ২৪, ২০২৪

ইউপিডিএফ কাউখালী-বটতলী সড়কে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে


নিজস্ব প্রতিবেদক:: সড়ক আছে, গাড়িও আছে কিন্তু কোন যাত্রী উঠলে গুনতে হবে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা এবং পঞ্চাশ বেত। ঘটনাটি শুনতে আশ্চর্যজক হলেও এটাই সত্যি। চালকরা চাঁদা আদায়ে বেঁধে দেয়া টার্গেট পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কাউখালী-বটতলী সড়কের সিএনজিতে যাত্রীদের পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে এমন অপ্রচলিত পদ্ধতি চালু করেছে পাহাড়ি শসস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ। ফলে গত বৃহস্পতিবার থেকে এ সড়ক ব্যবহারকারী অন্তত ছয়টি গ্রামের মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলা সদর থেকে কাশখালী হয়ে বটতলী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এ সড়কে প্রতিদিন শতাধিক সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করে। কাশখালী, বটতলী, বরইছড়ি, নাভাঙ্গা, ডোবাকাটা ও বর্মাছড়ি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করে তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করে থাকে। এর জন্য কৃষকদের একমাত্র বাহন হলো সিএনজি অটোরিক্সা।

এসব অটোরিক্সা চলাচলের জন্য চুক্তি বিরোধী প্রসীত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফ থেকে বাৎসরিক ৩ হাজার টাকায় গেইট পাস সংগ্রহ করতে হয় চালকদের। এ গেইট পাস না থাকলে যাত্রী নিয়ে কোন সিএনজি কাশখালী ব্রিজ অতিক্রম করতে পারে না। এ নিয়মেই চলে আসছিলো এ সড়কে যান চলাচল। কিন্তু হঠাৎ এ চাঁদার পরিমান দ্বিগুণ করে দেয়ায় চালকদের সাথে ইউপিডিএফ’র বিপত্তি বাঁধে। এক পর্যায়ে চালকরা অতিরিক্ত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) হাটের দিন থেকে সিএনজিতে যাত্রী পরিবহণ নিষিদ্ধ করে।

রাস্তায় গাড়ি থাকলেও ইউপিডিএফ এর ভয়ে কেউ গাড়িতে উঠতে সাহস পারছে না। তাদের নির্দেশনা অমান্য করে কেউ সিএনজিতে চড়লে তাতে গুনতে হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৫০ বেত। ফলে ছয়টি গ্রামের কয়েক হাজার সাধারণ পাহাড়ি নারী-পুরুষ এমনকি অসুস্থ রোগীদেরও সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়। উপায়ন্তর না থাকায় দীর্ঘ ৭-১০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটেই পারি দিতে হচ্ছে।

একইভাবে বাঙালি অধ্যুষিক কাশখালী গ্রামের প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাৎসরিক বা মাসিক হারে বিশেষ টোকেন নিতে হয় ইউপিডিএফ থেকে। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেঁধে দেয়া অংকের চাঁদা দিয়ে টোকেন নিতে না পারলে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকেও কোন উপজাতি বাজার সদায় করতে পারবে না। আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা অনেকটা আত্মগোপনে থাকা ইউপিডিএফ এভাবে সাধারণ মানুষকে মানব ডাল হিসেবে ব্যবহার করে লাগামহীন চাঁদাবাজি করে আসছে। একই কৌশল অবলম্বন করে ২০১৯ সালেও গাড়িতে যাত্রী পারাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয় সংগঠনটি।

নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করা একাধিক সিএনজি অটোরিক্সা চালক জানান, ইউপিডিএফ পূর্বে বাৎসরিক তিন হাজার টাকা চেয়েছে। বর্তমানে অতিরিক্ত চাঁদা দাবি করায় তা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তারা জানান, প্রতি বছর ইউপিডিএফ চক্রবৃদ্ধি হারে চাঁদার পরিমাণ বাড়াতে থাকে। এসব চাঁদা পরিশোধের পর গাড়ি চালিয়ে অর্জিত অর্থ থেকে সংসার চালানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে অর্ধশতাধিক পাহাড়ি বাঙালি চালক মানবেতর জীবন যাপন করছে।

কাউখালী থানার ওসি মো. পারভেজ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে সিএনজি সমিতির অনেকের সাথে কথা বলেছি তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রশাসনিকভাবে আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!