নুরুল আলম, কাউখালী থেকে ফিরে: রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজের এক শিক্ষক দুই প্রতিষ্টানে দীর্ঘদিন যাবত চাকুরী করার গোপন তথ্য ফাসঁ হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া যায়। ২০১২ সালে থেকে অদ্যবদি কলেজে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে সপ্তাহে একদিন এসে শুধু স্বাক্ষর করে রামু ব্যাংক সিনিয়র সহকারি ম্যানেজার পদে রীতিমতো কর্মস্থলে সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যান। কিন্তু কলেজে চাকরি না করে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে প্রতিমাসে সম্মানি বাবদ ১০ হাজার টাকা হারে বেতন ভোগ করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এর পর কলেজটি সরকারি হওয়ায় ঐতিপূর্বে চাকরির সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলে কাউখালী সরকরি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষকেরা তার প্রতিবাদ করায় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, কাউখালী সরকারী ডিগ্রি কলেজটি ১৯৯৯ সালে উপজেলা সদর হতে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে কচুঁখালী গ্রামে ১ একর ভুমির উপর স্থাপিত করা হয়। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তৎকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা। ভুমিদাতা ছিলেন তার মাতা রোয়াজা। সেই সময় কলেজটি ছিল বে-সরকারী। বে-সরকারী নিয়ম অনুযায়ী অধ্যক্ষ হতে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক/ শিক্ষিকা সহ সকল কলেজ স্টাফ তৎকালীন সময়ে কলেজ গভর্নিং নিয়োগ প্রদান করেন। ২০১২ সালে কলেজের ইতিহাস বিভাগের ১জন প্রভাষক গভর্নিং বডি নিয়োগ প্রদান করেন।
কলেজ যথাযথ নিয়ম কানুন মেনেই চলে আসছিল। ২০১৮ সালের ৮ই আগস্ট কলেজটি সরকারীকরন ঘোষনা করা হয়। সরকারীকরন ঘোষনা হওয়ার পর থেকে কলেজ সরকারী নিয়ম কানুন অনুসারে চললেও কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা অফিস স্টাফদের সাথে বিপত্তিকর আচারণ ও বাজে ব্যবহার করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষীকারা একত্রিত হয়ে তাদের পক্ষে সহকারী অধ্যাপক ব্যাবস্থাপনা (শিক্ষক) মো.এজাহার মিয়া বাদি হয়ে গত ২৯ মার্চ ২০২২ তারিখে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছাহাকের বিরুদ্বে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এই বিষয়গুলি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ পায় এবং বিষয়টি কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা কৃষি অফিসার কে আহবায়ক বানিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন বলে জানা যায়।
অপরদিকে গত ১১আগস্ট ২০২২ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসার কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজ পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শনকালীন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষীকাদের সাথে মতবিনিময় কালে কলেজে শিক্ষকদের মাঝ থেকে প্রশ্ন আসে যে একজন শিক্ষক কি করে দুই প্রতিষ্টানে চাকুরী করেন? তখনি এই গোপন বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে! বিষয়টি তৎক্ষনাত পরিচালক মহোদয় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি উপস্থিত সকলের সামনে স্বীকার করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছাহাক বলেন, ২০১২ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ মো. আব্দুল কাদেরের আমলে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক পদে বিপুল ভট্টাচার্য (১০/১০/২০১২) নামক ব্যাক্তিকে নিয়োগ প্রদান করেন। যার এনটিআরসিএ রোল নং ৪০৫০২৫২৫, ব্যাচ ৭তম, পাশের সাল ২০১১ইং ।
তিনি তখন থেকে কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজে (তখন বে-সরকারী ছিল) ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক পদে আছেন এবং তিনি সপ্তাহে শনিবার ১দিন করে ক্লাস করান এবং সপ্তাহের পুরো ৬দিনের স্বাক্ষর হাজিরা খাতায় একদিনে করে দেন শুধু তিনি নন কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলে কলেজে ৩দিন এসে ৬দিনের স্বাক্ষর হাজিরা খাতায় করেন। সেই সাথে বিপুর ভট্টর্চাজ ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার রামু ক্যান্টনমেন্ট শাখা ট্রাষ্ট ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে চাকুরী করে আসছেন। তিনি আরো বলেন, কলেজ হতে বে-সরকারীভাবে মাসিক যে ১০ হাজার দেয় তা নিয়ম অনুসারে বিল ভাউচারের মাধ্যমে গ্রহন করি। বিষয়টি নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ভিষণ হট্টগোলের সৃস্টি হয়। পরিচালক মহোদয় বিষয়টি শুনে হতভম্ব হয়ে যান। পরিচালক প্রভাষক বিপুল ভট্টাচার্য কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন্ন করলে তিনি এর সত্যতা স্বীকার করেন।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কলেজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অফিস স্টাফ সহ উপস্থিত সকলের একটাই প্রশ্ন জাগে তা হলো একজন ব্যাক্তি সরকারী প্রতিষ্টানে কর্মরত থাকার পাশাপাশি আরেকটি বে-সরকারী প্রতিষ্টানে ২০১২ সাল থেকে কি করে চাকুরী করে আসছেন? তাহলে বিপুল ভট্টাচার্য ২০১৮ইং সালে কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজ সরকারী করন করা হয় সেই থেকে শিক্ষক বিপুল ভট্টার্চায কি সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সরকারী সকল এরিয়ার বিল ২০২২ইং পর্যন্ত নিবেন না। যার এরিয়ার বিল আনুমানিক প্রায় ১৮-২০ লক্ষ টাকার মতো গিয়ে দাড়াবে বলে উপস্থিত সকলে এক বাক্যে জানান।
তাহলে কি কারনে এই গোপনীয়তা খেলা খেললেন বিপুল ভট্টাচার্য এবং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছাহাক। বিষয়টি নিয়ে বিপুল ভট্টাচার্য বলেন, আমি কলেজে চাকুরী করি নামের জন্য কিন্তু আমি তো একটা বে-সরকারী ব্যাংকে চাকুরী করি এবং বে-সরকারি কলেজের বেতন অনুসারি প্রতিমাসে বিল ভাউচার এর মাধ্যমে আমি কলেজ হতে মাসিক সম্মানি গ্রহন করি। তাকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে একজন ব্যাক্তি সরকারী এবং বে-সরকারী দুই প্রতিষ্টানে এক সঙ্গে চাকুরী করতে পারেন কিনা ? তখন তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান কোন কথা বলেন নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন কলেজের প্রতিষ্টাতা সভাপতি ও সাবেক রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা তিনি বলেন এক সময় কলেজ বে-সরকারী ছিল এখন কলেজ সরকারীকরন হয়েছে সম্পুর্ন সরকারী নিয়ম কানুন মেনেই চলবে তাহলে এই বিষয়টি গোপন রেখে অধ্যক্ষ কি কারনে কেন এই গোপনীয়তা বজায় রাখলেন কার স্বার্থে এটাই দেখার বিষয়। তা ছাড়া আমি বিষয়টি জানতে পেরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ট্রাষ্ট ব্যাংক রামু শাখার ব্যাবস্থাপক লিটন কান্তি নাথের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। তিনি আমার কাছে বিপুল ভট্টাচার্য যে সেই ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে ২০১২ইং সাল থেকে চাকুরী করে আসছেন তা অকপটে স্বিকার করেন বলে তিনি জানান। কলেজ সরকারী হওয়ার পর আমি আর কলেজের গভর্নিং বডির কমিটির সভাপতি পদে নেই। ইউএনও বর্তমানে সভাপতি বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজের সভাপতি নাজমুন আরা সুলতানা সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। আর এ ব্যাপারে কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ আমাকে কিছুই জানাননি। তাছাড়া একজন ব্যাক্তি একটি সরকারী প্রতিষ্টানে অন্যদিকে আরেকটি বে-সরকারী প্রতিষ্টানে কি করে চাকুরী করে তা তো সম্পুর্ন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, আমি যেহুতু বিষয়টি জেনেছি বিষয়টি আমি অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করবো বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে কাউখালীর সচেতন মহল এবং কলেজের সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা/স্টাফ এবং অভিভাবকদের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একজন ব্যাক্তি কি করে এত বছর যাবত দুই প্রতিষ্টানে চাকুরী করে আসছেন তার খুটির জোর কোথায় ? কেনইবা সে দুই প্রতিষ্টানে চাকুরী করবেন। তাহলে এটা কি সরকারী আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ নয়? সচেতন মহল এর সুষ্ঠ আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের উর্দ্ধোতন মহলের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।