গাড়িতে আগুণ,সড়ক অবরোধ: ইউপিডিএফ সংগঠক হত্যায় নিন্দা
আল-মামুন,খাগড়াছড়ি:: খাগড়াছড়ির গুইমারায় ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুনকে (৫০) গুলি করে হত্যার ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে পাহাড়। শুক্রবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে অংথোই মারমা সাংগঠনিক কাজে যাবার পথে গুইমারার দেওয়ান পাড়া নামক স্থানে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান অংথোই মারমা ওরফে আগুন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে এবং পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান। এ ঘটনার পর লাশ উদ্ধারের সময় ম্যাগাজিনসহ ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত অংথোই মারমার পিতার নাম কংহ্লাউ মারমা। তাঁর বাড়ি উপজেলার যৌথখামারের বুদুংপাড়ায়। এ ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা একবিবৃত্তিতে গুইমারায় ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুনকে (৫০) গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক বিবৃতিতে তিনি এই নিন্দা জানান।
তিনি আরো বলেন, সংঘাত বন্ধে পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় এ গণআন্দোলনকে ভেস্তে দিতে শাসকগোষ্ঠী ও তার বাহিনী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যার কারণে তারা সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে খুন করে সংঘাত উস্কে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি সবাইকে শাসকগোষ্ঠীর এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে অংথোই মারমার (আগুন) হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ ঘটনার সূত্র ধরে মালবাহী ট্রাকে আগ্নি আগুণ দেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রামগড় উপজেলার দাতারাম পাড়া ও গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়িতে পৃথক স্থানে মাল বোঝাই ট্রাকে এ আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আতঙ্কের পাশাপাশি সড়কে চলাচলে বিঘ্নসহ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বাড়ছে।
তবে এ আগুন দেওয়ার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এদিকে ট্রাক চালক জানান, সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করতে চেয়েছিলো। সে হাতে-পায়ে ধরে জীবন ভিক্ষা নিয়েছে। এরপর গাড়িতে আগুন দেয় তারা। গাড়ির শ্রমিকরা জানান, আগুণ দেওয়ায় গাড়ির আনুমানিক ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ইউপিডিএফের সংগঠক অংথুই মারমা আগুনকে হত্যার প্রতিবাদে হিসেবে তাৎক্ষণিক এই অবরোধ পালন করে সংগঠনটি। রামগড় ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা মো. ইফতেখার উদ্দীন জানান, খবর পেয়ে দ্রুত দুটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়িটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রশিদ ও রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে।
এ হত্যার ঘটনায় ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করে বলেন, সকালে ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা সাংগঠনিক কাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় দেওয়ান পাড়া এলাকায় পৌঁছলে ওঁৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান বলে জানান। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান সংগঠনটি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গুইমারা উপজেলা সমন্বয়ক নবীন চাকমা বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। ইউপিডিএফের নিজেদের কোন্দল ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগী নিয়ে তাকে নিজেরাই হত্যা করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে বলে পাল্টা অভিযোগ তোলেন।