নুরুল আলম:: খাগড়াছড়িতে শিশু শিক্ষার্থী শ্রাবণের মৃত্যু হয়েছে, না হত্যা? এটা নিছক দুর্ঘটনা নাকি, কারো গাফেলতিতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে? খাগড়াছড়ি খবং পুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেট চাপা পড়ে শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ান নিহত হওয়ার পর এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। ঘটনার পর থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককেও বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি।
আর এ সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজতে ও ঘটনার রহস্য উম্মোচনে অবশ্যই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও শিক্ষা বিভাগের আহ্বায়ক নিলোৎপল খীসাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। এ কমিটির সদস্য সচিব খাগড়াছািড় জেলা শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন ও সদস্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম। খাগড়াছািড় জেলা শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ দিকে নিহত শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ানের দাহক্রিয়া ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। তিনি এ ঘটনাকে মর্মান্তিক ও দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। ঘটনার পর থেকে শ্রাবণের পরিবারে চলছে শোকে মাতম। বার মূর্চা যাচ্ছেন শ্রাবণের মা বাসনা চাকমা ও বাবা প্রণয় দেওয়ান।
বুধবার (১০ আগস্ট) সকাল ৯টা। প্রতিদিনের মতো খবং পুড়িয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ান তার মা বাসনা চাকমার হাত ধরে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছিল। এ সময় বিদ্যালয়ের গেইটটি তাদের উপর পড়ে। মা বাসনা বেঁচে গেলেও ছেলে শ্রাবণ দেওয়ান ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। শ্রাবণ দেওয়ান জেলা সদরের নারায়ন খাইয়া পাড়ার প্রণয় দেওয়ানের ছেলে। অভিভাবকরা এ ঘটনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে।
ঘটনার কাছাকাছি উপস্থিত পুলিশের এ এসআই গোবিন্দ চন্দ্র রায় জানান, স্কুলের গেটটি দীর্ঘ দিন ধরে একটি গাছের খুটি দিয়ে আটকানো ছিল। কিন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থায় না নেওয়ায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারো যদি গাফেলতি থাকে অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার।’
খবর শুনে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রবিউল ইসলাম।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন ঘটনার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা স্বীকার করে এ ঘটনার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটিকে দায়ী করে বলেন, ‘২০২১ সালে এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপ্ররার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খবং পুড়িয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ পান। আর অর্থ বরাদ্দ দেন খাগড়াছড়ি উপজেলা এলজিইডি। উপরে চকচক করলেও কাজের মান ভাল হয়নি। গেটটি কাঠের খুটি দিয়ে আটকানো ছিল। এ বিষয়টি তাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানাননি।’
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এস অনন্ত ত্রিপুরাকে বার বার ফোন করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শানে আলম বলেন, ‘কারো গাফেলতি থাকলে তাকে অবশ্য আইনের আওতায় আনা হবে।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর তাৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম খবং পুড়িয়া সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। আর ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের গেটসহ বাউন্ডারি ওয়াল নির্মিত হয়। কিন্তু এ দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যালয়ের গেটটি না লাগিয়ে গাছের খুটি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল।