শিরোনাম
মঙ্গল. ডিসে ২৪, ২০২৪

অবশেষে কাপ্তাই ইউএনও’র উদ্যোগে অন্ধ লক্ষীরাণী পেল “লক্ষীনিবাস”


নিজস্ব প্রতিবেদক:: স্বামী সন্তান হারা ষাটরোর্ধ্ব অসহায় অন্ধ লক্ষী রানী দে পেল “লক্ষীনিবাস”। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহানের উদ্যোগ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় লক্ষীরানী দে মাথা গোঁজার ঠাই পেলেন। এতে লক্ষীরানী দে আবেগ- আপ্লুত হয়ে কান্না করতে থাকেন।

প্রসঙ্গত, কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের বারান্দায় গত ১৫ বছর ধরে লক্ষীরানী দে বসবাস করে আসছে। ওই বারান্দা ছাড়াও মিশন হাসপাতাল গেইট এবং চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারে দিনরাত কাটে তার । কি শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনটিই তার জীবনে প্রভাব পড়েনি। একবেলা খাবার পেলেই চলে যায় তার দিনরাত । জীবনে সুখ কি, লক্ষীরানী দে’ গত ৩০ বছরেও বুঝেনি।

রাঙামাটির রাজবাড়ি এলাকায় তার বাপের বাড়ী। বাবার নাম ক্ষিতিশ বিশ্বাস। কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার ফলে তাদের পৈত্রিক বাড়ী কাপ্তাই লেকে তলিয়ে যায়। এরপর স্বাধীনতার আগেই স্ব-পরিবারে তারা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা হিন্দু পাড়ায় মামার বাড়ী চলে আসে। সেখানেই তার বিয়ে হয় রাউজান উপজেলার উনসত্তর পাড়া গ্রামের মানিক চন্দ্র দে’র সাথে। সুখেই চলছিল তাদের জীবন। স্বামী কৃষি কাজ করে সংসার চালাতো। এরই মধ্যে তার ২ সন্তান পৃথিবীতে ভুমিষ্ট হয়। কিন্ত এই সুখ বেশিদিন টিকেনি। তার প্রথম সন্তান লিটু দে মাত্র ১৩ বছর বয়সে দূরারোগ্য ব্যধিতে মারা যাবার ৬ বছর পর আরেক ছেলে সুজয় দে’ও ১১ বছর বয়সে মারা যায়। ছেলে হারা লক্ষীরানীর জীবন এক বিভীষিকায় পরিনত হয়।

ছেলে হারানোর ৮ বছর পর লক্ষীরানী দে’র স্বামী মানিক চন্দ্র দে’ ফেরার দেশে চলে যায়। স্বামী মারা যাবার পর তার জীবনে নেমে আসে আরও চরম দূর্বিসহ দিন। শশুড় বাড়ীর লোকজনের অত্যাচারে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে চন্দ্রঘোনা হিন্দুপাড়ায় মায়ের ঘরে চলে আসেন তিনি। সেখানেও সুখ অধরা হয়ে রইল।

এরপর তিনি চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মনোজ বড়ুয়ার বাসায় কাজ নেয়। ডাঃ মনোজ বড়ুয়া ছাড়াও মিশন এলাকার অনেকের বাসাবাড়ীতে ঝি’ এর কাজ করে কোন রকমে তার জীবন চলতে থাকে।

এরই মধ্যে তার জীবনে আসে আরো একটি দুঃস্বপ্ন। ১৯৯২ সালে চোখে দেখা দেয় তার কঠিন রোগ। অপারেশন করাতে গিয়ে তিনি হারান তার দু’চোখ। চোখ হারানোর পর অনেকের বাসায় তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে মানুষের দেওয়া অন্নবস্ত্রে তার জীবন চলে। যেদিন পায় সেদিন খায়, না পেলে কখনও পানি খেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়ে লক্ষী রানী দে।

পত্র পত্রিকায় লক্ষ্মীরানী দে’কে নিয়ে বিভিন্ন হৃদয়বিদারক সংবাদ প্রচারিত হয়। এসব সংবাদ নজরে আসার পর এগিয়ে আসেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান। তিনি বেশ কয়েকবার মিশন হাসপাতাল গেইট এলাকায় এসে লক্ষীরানীর খোঁজ খবর নেয় এবং তাকে আর্থিক সহায়তা করেন। সেসময় ইউএনও মুনতাসির জাহান তাকে একটি ঘর করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। ইউএনও’র এই উদ্যোগে এগিয়ে আসে চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা মংচিং মারমা। তিনি এক গন্ডা জায়গা দেন লক্ষীরানী দে’কে ঘর করে দেওয়ার জন্য। সেই জায়গার উপর কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান স্থানীয় উদ্যোগে গত মাসে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন।তিনি কথা দিয়েছিলেন বর্ষার আগেই লক্ষী ঘরে উঠবে। কথা রেখেছেন তিনি।

অবশেষে গত বুধবার (১ জুন) কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান ওই জায়গায় নিজে এসে অন্ধ লক্ষীরানী দে’কে নতুন ঘরে তুলে দেয়।লক্ষীর জন্য নতুন কাপড়, খাবারদাবার, ঘরের সরঞ্জামাদিসহ নিয়ে আসেন তিনি। এসময় উপস্থিত সকলকে মিস্টিমুখ করিয়ে “লক্ষীনিবাসের” যাত্রা শুরু করা হয়। কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ বিকে দেওয়ানজী, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সজল বিশ্বাস, কাপ্তাই প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্তসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!