শিরোনাম
বুধ. ডিসে ২৫, ২০২৪
মৃত সনদ দেখিয়ে ঋণ গ্রহীতা ও অভিভাবকদের ঋণ মওকুফ নাটক

নিজস্ব প্রতিবেদক:: নাম ঠিকানাও পরিচয়হীন ব্যক্তিদের নামে প্রথমে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরণ। পরে তা জাল-জালিয়াতি করে তাদের মৃত সনদপত্র তৈরি করে (ঋণ গ্রহীতাদের বা তাদের অভিভাবকদের) মৃত দেখিয়ে প্রায় ৯ লক্ষ ঋণের টাকা মওকুফ করার নাটক তৈরীর মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আনন্দ’ এনজিও বিরুদ্ধে।

আনন্দ এনজিও কতিপয় কর্মকর্তা নিজেরাই পৌরসভার কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের নামে সীল তৈরী ও জনপ্রতিনিধিদের নাম জাল স্বাক্ষর করে,ঋণ গ্রহিতা এবং তাদের স্বামী ও অভিভাবকদের মৃত সনদ সংযুক্ত করে সে ঋণ পকেটস্থ করা উঠেছে।

এসকল বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। তবে এসব প্রক্রিয়ায় নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে স্বীকার করলেও দুর্নীতি ও জাল জালিয়াতির বিষয় মানতে নারাজ সংস্থার কর্মকর্তারা।

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, আনন্দ সংস্থার কমিউনিটি অর্গানাইজার ম্যামাচিং মারমা,ইউনিট ম্যানেজার শংকর বিশ্বাস, সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার (ক্রেডিট) মো: জাহাঙ্গীর আলম এবং রিজিওনাল ম্যানেজার বিজয় কৃঞ্চ বালা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন সময় এমন দুর্নীতি ঘটেছে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার শান্তি বিকাশ চাকমা ও পেরাছড়া ইউনিয়নের মেম্বার কংজরী মারমার নামীয় সীল ও স্বাক্ষর জাল করে ৩১ জনকে দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের মেম্বার দিলু মোহাম্মদ ও কবাখালী ইউনিয়নের মেম্বার আবুল কালামের সীল ও স্বাক্ষর জাল করে ১২জনকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর মোস্তফা মিয়া,মো: আলী হোসেন,এমরান হোসেন,সোহেল রানা,হাসেম ভূইয়া,আলা উদ্দিন লিটনের সীল ও স্বাক্ষর জাল করে ২১ জনকে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মো: মাসুদুল হক ও অতিশ চাকমার সীল ও স্বাক্ষর জাল করে ৫০ জনকে মৃত দেখিয়ে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ঋণ মওকুফ করেছেন। যা জালজালিয়াতি ও অপরাধ।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো: মাসুদুল হক অভিযোগ করে জানান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আনন্দ ২০০৭ সাল হতে বিভিন্ন সময় তার ওয়ার্ডের নাম পরিচয় ও ঠিকানাহীন ১৬ জনসহ ৮১ জনকে ১৭ লক্ষ টাকা ঋণ দিয়েছেন এবং ২০১৭ সালে এসে তার ওয়ার্ডের ঋণগ্রহীতাদের মৃত দেখিয়ে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫শত ৬২ টাকা সহ প্রায় নয় লক্ষ টাকা ঋণ মওকুফ করেছে।

ঋণ মওকুফ করতে খাগড়াছড়ি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভা, কমলছড়ি, পেরাছড়া, কবাখালী, বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন জনপ্রতিনিধির সীল ও স্বাক্ষর জাল করে ঋণগ্রহীতা এবং কতিপয় ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবকদের মৃত দেখিয়ে আনন্দ এনজিওর কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

সংস্থার কর্তাদের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন উল্লেখ করে জানান, জবাব সন্তোষ জনক না হলে তিনি সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর আলাউদ্দিন লিটন, মো: মোস্তফা মিয়া বলেন, তারা কখনো কাউকে মৃত হিসেবে সনদ দেননি। আনন্দ এনজিওর প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসলে তারা ঋণ গ্রহীতাদের খবর নিয়েছেন। কারো ঠিকানা সঠিক পাচ্ছে না উল্লেখ করে বলেন-তাহলে ঋণ প্রকৃতপক্ষে কাদেরকে দিলেন? তারা কারা?

কাদের ঋণ মওকফ করলেন? আনন্দ এনজিওর কর্মকর্তারাই পরস্পর যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেন এসব জনপ্রতিনিধি। কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার শান্তি বিকাশ চাকমা জানান, তিনি তার ওয়ার্ডে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছেন যাদের নামে ঋণ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগের নাম ঠিকানা সঠিক নয়। দু-একজনের নাম মিললেও তারা জীবত আছেন তবে মিলেনী তাদের স্বামীর নাম ও ঠিকানা। ভূয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে সংস্থার লোকজনই টাকা উত্তোলন করেছেন এবং পরে আবার ঋণ গ্রহীতাদের মৃত দেখিয়ে নিজেরাই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তিনিও অভিযোগ করেন।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অতিশ চাকমা বলেন, আনন্দ সংস্থার কর্মকর্তারা পরষ্পর যোগসাজশে তার ১নং ওয়ার্ডে ৩৪ জনকে ৩ লক্ষ ১২ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছেন এবং ২০১৭ সালে এসে ২৩ জন ঋণ গ্রহীতা এবং ১১জন অভিভাবককে মৃত দেখিয়ে ১ লক্ষ ২৪হাজার ৪শত ৩৮ টাকা ঋণ মওকুফ করেছেন মর্মে দেখা যায়।

কাউন্সিলর অতিশ চাকমা আরো বলেন, তিনি কাউকে মৃত হিসাবে শনাক্ত করার বা সনদ দেবার ক্ষমতা রাখেন না। জন্ম বা মৃত্যু সনদ একমাত্র মেয়র ইস্যু করে থাকেন। তার সীল ও স্বাক্ষর জাল করে আনন্দ এনজিও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ঋণ গ্রহীতা বা তাদের স্বামী বা অভিভাবকদের মৃত দেখিয়ে ঋণ মওকুফ দেখিয়ে ঋণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনিও সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!