নুরুল আলম:: খাগড়াছড়ি ও গুইমারা নানা আয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই যুগ পূর্তি পালিত হচ্ছে। বিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন ও পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়।
র্যালীর উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার পার্বত্য চট্টগ্রাম চাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এ সময় তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি ভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক বলে জানান।
তিনি বলেন, চুক্তির অনেক ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। যে সব ধারা বাস্তবায়িত হয়নি সে সব ধারা বাস্তবায়নে সহনশীল মনোভাব নিয়ে সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলী রেজা, খাগড়াছড়ি বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মো: জাহাঙ্গীর আলম, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল তৌফিকুল বারী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়নের জিটু আই মেজর জাহিদ হাসান সহ উচ্চ পদস্থ সাময়িক-বেসাময়িক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই যুগপূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিউট প্রাঙ্গণে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন, ডিসপ্লে প্রদর্শন এবং চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটা হয়। জেলা রিজিয়নের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় অসহায় ও গরীব মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা। এছাড়াও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে মাস্ক বিতরণ ও কম্বল বিতরণ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি আয়োজন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রায় দুই দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাতে গেরিলা নেতা সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পনের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমীতির সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়নের আয়োজনে সহস্্রাধিক পাহাড়ি বাঙ্গালীর অংশ গ্রহনে সকালে হাফছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে থেকে র্যালীটি শুরু হয়। পরে গুইমারা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে আলোচনা সভার মাধ্যমে শেষ হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রিদওয়ানুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বিজিবির গুইমারা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার লে. কর্ণেল সৈয়দ সালা উদ্দিন নয়ন, মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল ওয়ালিদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী, গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা, মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো: জয়নাল আবেদিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্য চুক্তি করে। এ চুক্তির অধিকাংশ ধারা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনী ও সরকারে প্রচেষ্ঠা অব্যহত রয়েছে।
এসময় সেনা ও বিজিবির পদস্থ কর্মকর্তাগণ সহ ৫ উপজেলা চেয়ারম্যানগণ এবং সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর পরে বেলুন ও শান্তির পায়রা উড়িয়ে শান্তি মেলার উদ্বোধন করেন রিজিয়ন কমান্ডার।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে ভলিবল টুর্নামেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মানবিক সহায়তা এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার আয়োজন করা হয়।
রাত ৬ ঘটিকায় সুমপ্রীতি কনসার্ট শুরু হয়। সোমপ্রিটি কনসার্টের সমাপ্তির পর অঞ্চল সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি, খাগড়াছড়ি সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এসময় জেলা প্রশাসক, জিএম অঞ্চল, ভারপ্রাপ্ত সেকেন্ডারি গুইমারা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বেসামরিক ও মিলের কর্মকর্তাম স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা।
অপর দিকে, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য ও গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমার নেতৃত্বে শান্তিচুক্তির ২৪ বৎসর পূর্তি উপলক্ষে গুইমারায় বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামীলীগের অংঙ্গ সংগঠন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন।