নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:: মাটিরাঙার গোমতি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক পরস্পর বিরুধী অভিযোগ । গোমতি বি কে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লেনদেনের অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানিয়েছে গোমতি বি.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা জানান, গত ১৯৯৪ সালে তিনি গোমতি বি.কে উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৯ বছর সহকারী শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি প্রথামিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদানের সুযোগ পায়। কিন্তু বি.কে বিদ্যালয়ের প্রতি মায়া লাগার কারনে তিনি ছেড়ে যেতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০০৫ সালের মার্চ মাসে গোমতি বি কে উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক লৎফর রহমান প্রামানিক এর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ৬ মাস অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসর প্রাপ্ত হলে ঐ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সেই দায়িত্ব পান। কিন্তু প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব নুরুল হুদা কে না দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। উল্লেখিত নিয়োগ নিয়ে সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। পরবর্তীতে সেটি আপোষ মিমাংশার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। এরই মধ্যে বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব রফিকুল ইসলামের নিকট থেকে সাবেক ম্যানেজিং কমিটির লোকেরা তাকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিবে বলে ১২ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়। বিভিন্ন হয়রানির পর ২০১৯ সালে নিয়োগ পরিক্ষায় প্রথম হয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োজিত হয়। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি এই নিয়োগ নিয়ে বিপুল অর্থ দাবি করে অর্থ না দেয়ায় তার একটি দোকান প্লট বিক্রি করে টাকা দিতে হয়। এছাড়াও বর্তমান সভাপতি প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদার নিকট বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ১ লক্ষ টাকা দাবি করে বর্তমান সভাপতি আল মামুন, কিন্তু প্রধান শিক্ষক সেই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদার বিরুদ্ধে সভাপতি আল মামুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ও জনসম্মুখে চেক জালিয়াতী সহ বিভিন্ন রকম অভিযোগ দায়ের করেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো জানান, জুলাই ২০১৯ বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম নিয়োগ প্রাপ্ত হন। সে শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতেন। তাহার নিয়োগের পর শুরু হয় এই বিদ্যালয়ের ষড়যন্ত্রের জাল।
অন্যদিকে শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল জানান, রফিকুল ইসলাম শান্তিপুর স্কুলের থাকা কালীন এখানকার অবস্থা ছিল খারাপ। বর্তমান গোমতি বি কে স্কুলের অবস্থা খারাপ। কিন্তু শান্তিপুর স্কুলের অবস্থা ভালো বলে জানান তিনি।
সাবেক কমিটির অভিভাবক সদস্য তোফাজ্জল হোসেন জানান, বর্তমান প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লেনদেন এর যে অভিযোগ দায়ের করছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সেটি তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে। পূর্বে মিমাংশিত ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬শত ১ টাকা ঘটনা সামনের ম্যানেজিং কমিটির নিবার্চনকে কেন্দ্র করে অভিযোগ করছে। এসকল ঘটনার সমাধান পূর্বেই করা হয়েছে। যে টাকা প্রধান শিক্ষকের নিকট পাওনা বা দাবি করেছে প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা তা আগে পরিশোধ করে দিয়েছেন। বর্তমান সভাপতি আল মামুন প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদার নিকট ধার চাওয়া ১ লক্ষ না দেওয়া এসকল অভিযোগ করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করেন।
অভিযোগের বিষয় নিয়ে বর্তমান সভাপতি আল মামুন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গোমতি বি.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা স্বাক্ষর জালিয়াতী করে টাকা উত্তলন করে। এই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করলে তিনি উপজেলা শিক্ষক অফিসারসহ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
গোমতি বি কে উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ক্যারানী) সাদেক হোসেন বলেন, অফিস সহকারী নিয়োগ হওয়ার সময় আমার নিকট কোনো টাকা চায়নি এবং আমিও কোনো টাকা দিইনি। এসব তথ্য মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন সাদেক হোসেন।
গোমতি বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, যদিও বিদ্যায়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তবে টাকা লেনদেন সম্পর্কে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেখা শুনা করেন। উল্লেখিত অভিযোগের নিয়ে আমার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন এর বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী এই দুই মাসের বেতন পায় কিন্তু বাকী ৭ মাসের টাকাই বকেয়া।
বর্তমান কমিটির সভাপতি আল মামুন এর কাছে অভিযোগের কপি চাইলে তিনি বিভিন্ন অযুহাত দেয়। রির্পোট লেখার আগপর্যন্ত এই প্রতিনিধির নিকট কোনো প্রকার অভিযোগের কপি ও তথ্য প্রমানাধি উপস্থাপন করেনি।