নিজস্ব প্রতিবেদক:: পাহারে চাঁদাবাজির অভয়ারণ্য স্থানীয় হাট-বাজার। নিরুপায় জনগণ। পাহারের আরেক নাম চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। বর্তমানে সশস্ত্র চার সংগঠনের চাঁদাবাজির প্রতিযোগিতার তান্ডবে পাহাড়ের নিরীহ জনগণ চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে। প্রতিনিয়ত এক শ্রেনীর মুখোশ ধারী সাংবাদিক ইউপিডিএফ এর সাথে সম্পর্ক রেখে চাঁদা আদায়ে সহযোগিতা করছে। কার কত আয় ও ব্যয় হিসাব দেয় এই সকল সাংবাদিকরা। আদায়কৃত টাকা থেকে পারসেন্টিজ হিসাবে পায় এই সকল মুখোশধারী সাংবাদকিরা।
প্রায় অধিকাংশ হাটবাজার গুলো শনি ও মঙ্গল বারে হাটবসে থাকে। তারই অংশ হিসাবে ১৪ সেপ্টেম্বর গুইমারা বাজারে বিভিন্ন সংগঠনের নামে বাজার থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাজার কমিটি এই চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে গুইমারা বাজারে অতিতের অর্জিত সুনাম ক্ষুন্ন হবে।
পাহাড়ি বাঙালি মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা নির্ভয়ে চাঁদা নিচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরবতার কারনে। বিপুল পরিমাণ চাঁদা আয়ের কারণে তারা এতাটা বেপরোয়া হতে পেরেছে। চাঁদা না দিলে হুমকি, অপহরণ ও খুনের মতো ঘটনা ঘটাতে পাহাড়ী সংগঠনগুলো এতোটুকু দ্বিধা করে না। একবার অপহরণ করা হলে দাবী করা হয় বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণের টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের সকল ধরণের নিরাপত্তা সংস্থা বিপুল পরিমাণে মোতায়েন থাকলেও এখানে পাহাড়ী সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহরণের ঘটনা মুক্তিপণ ছাড়া তাদের মুক্ত করার ঘটনা বিরল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোন বাস চলাচল করতে হলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয়। মালামাল ভর্তি ট্রাক পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বহির্গমনের জন্য প্রতি ট্রিপে চাঁদা দিতে হয় । ট্যাক্সি, মোটর সাইকেল, চাঁদের গাড়িকেও চাঁদা দিতে হয়।
পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজার হতে বাৎসরিক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করে থাকে সন্ত্রাসীরা। দোকানপিছু মূলধনের ওপর ভিত্তি করে বাৎসরিক ৩ শত থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে চাঁদা পরিশোধে বাদ যায় না ছোট্ট পানের দোকান মালিকও। গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন শাকসবজি আলু, কলা, বেগুন, কচু; পাহাড়ে উৎপাদিত ফল আনারস, তরমুজ ইত্যাদি পণ্য বিক্রেতাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে সন্ত্রাসীরা।
বাঁশের ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায়ীকে সর্বপ্রথম উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের নিকট হতে নিবন্ধন নিতে হবে। এই নিবন্ধন করতে ব্যবসায়ীকে নিজ নামে অবশ্যই ১৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। অন্যথায় সে বাঁশের ব্যবসা করতে পারবে না। বাঁশের চালি যখন নৌপথে পরিবহন করা হয়, তখন প্রতি হাজার বাঁশের জন্য ৫ শত টাকা চাঁদা দিতে হয়। ব্যক্তি নিবন্ধিত থাকলেও যদি এই চাঁদা পরিশোধ না করে তবে সন্ত্রাসীরা চালি আটকে রাখে। বেত জাতীয় সম্পদ পরিবহন করতে গেলে বেত বোঝাই ট্রাক প্রতি ২০ হাজার টাকা চাঁদা পরিশোধ করতে হয়।
এক হিসাবে জানা গেছে বার্ষিক প্রায় ৪ শত কোটি টাকা চাঁদাবাজির মাধ্যমে আয় করে থাকে পার্বত্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। নেতাদের পকেট ভারী, অস্ত্র কেনা ও সংগঠনের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি এই চাঁদার একটি বড় অংশ ব্যয় হয় পাহাড়ী সংগঠনগুলোর পক্ষের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম পরিপালনে। যেকোনো ইস্যুতে পাহাড়ীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীদের পাহাড়ে নিয়ে আসতে এই টাকা ব্যয় করে থাকে। শুধু বাঙালী নয়, পাহাড়ীরাও এই চাঁদাবাজীর কবল থেকে মুক্ত নয়। চাঁদা দিয়ে পাহাড়ে বসবাস যেন এখানকার নিয়তি, আইন। সরকারী ট্যাক্স না দিয়ে পার পাওয়া গেলেও চাঁদা না দিয়ে পার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাই জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে চাঁদাবাজী মুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই।