আল-মামুন,খাগড়াছড়ি:: ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ের মানুষের ঐহিত্যবাহী প্রাণের উৎসব বৈসাবী। নদীতে গঙ্গা মায়ের উদ্দেশ্যে বন্ধনার মাধ্যমে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দু:খ গ্লানি মুছে সকল জাতি ধর্মের মানুষের মঙ্গল কামনা করে এই বছর বিজুর সুচনা করে চাকমা সম্প্রদায়।
সোমবার সকালে চেঙ্গী নদী,মাইনী নদী,ফেনী নদীসহ প্রবাহমান নদীতে তুরুন-তরুনীসহ নানা বয়সী সম্প্রদায়ের ঐহিত্যবাহী পোশাকে ফুল পুজা করে। পরে বিশেষ প্রার্থনা করে নদীতে ভাঁসিয়ে দেন ফুল। তবে এবার চোখে পড়ার মত ছিল করোনায় সচেতনা। মাস্ক পরিধান করে তারা নদীপাড়ে আসেন। এছাড়াও সূর্য্যদ্বয়ের সাথে সাথে ভীড় জমে নদীপাড়ে।
মুলত ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’,মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিঝু’। এ তিন‘র আদ্যাক্ষরের সম্মিলন ‘বৈসাবি’। বৈসাবী মানেই পাহাড়ে প্রাণের উৎসব আর সম্প্রীতির মেলবন্ধন। বছরের পর বছর ধরে অরণ্যঘেরা পাহাড়ে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবী’ উচ্ছাসেরর রঙ ছড়ালেও গত বছরের মতো এবছরও বৈশ্বিক মহামারী করোনার থাবায় ধূসর হয়ে গেছে পাহাড়ে প্রাণের অনুষ্ঠান বৈসাবীর উচ্ছাস।
১২ এপ্রিল ভোরে সুর্যোদয়ের সাথে সাথে নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হয় উৎসবের সুচনা। ১৩ এপ্রিল অর্থাৎ নববর্ষের আগের দিন ‘হারি বৈসু’ আর নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে মারমাদের সাংগ্রাইয়ের সূচনা। ১২ এপ্রিল ভোরে সুর্যোদয়ের সাথে সাথে নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে বৈসাবী উৎসব চলে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে কোথাও কোথাও এ উৎসব চলে সপ্তাহ ধরে।
বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে সারাদেশে একই নিয়মে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হলেও পাহাড়ে ভিন্ন আমেজে আর উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপতি হয় ‘বৈসাবী’ উৎসব। যা পাহাড়ের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব হিসেবে পরিচিত। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ‘বৈসাবী’ উৎসবের সাথে স্থানীয় বাঙ্গালীরাও একাকার হয়ে মিশে যায় বৈচিত্রময় এ উৎসবে।
এ বছর ‘বৈসাবি’ উৎসব শুরুর মাত্র একদিন বাকী থাকলেও করোনা মহামারীতে পাহাড়ে নেই উৎসব আমেজের রং। প্রানোচ্ছ¡ল আর বৈচিত্রময় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজনে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি পল্লীগুলোতে নেই উৎসবের রং। তবে প্রতিবছরের মত এবার থাকছেনা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে বৈসাবী উৎসবের শোভাযাত্রা আর খাগড়াছড়ির পানখাইয়াপাড়ার বটতলায় বর্ণিল জলকেলি উৎসব। তবে এবার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিগুলো ঘরোয়া পরিবেশে এই উৎসব পালন করা হবে বলে জানায় বিভিন্ন সম্প্রদায়।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, প্রত্যেক বারের মত এবার পাহাড়ে ঘটা করে বৈসাবী উদযাপন করা হচ্ছে না। করোনা মহামারি কারনে ‘বৈসু’ ‘সাংগ্রাই’ ‘বিঝু’ বাঙ্গালীর বৈশাখ পালন করা হচ্ছে সংক্ষিপ্ত। ঘরোয়া পরিবেশে এবার উৎসব মুখোর পরিবেশে বৈসাবী উদযাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য এ্যাড. আশুতোষ চাকমা,মেমং মারমা,এমএ জব্বার বলেন, মহামারি করোনা ইতিমধ্যে ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। এ মুহূর্তে উৎসব পালনের চেয়ে জীবন বাঁচানোটা গুরুপূর্ণ। তাই সরকারী বিধিনিষেধ মেনে এবার পাহাড়ে বৈসাবী উৎসব পালন করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবী’ নামে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ‘বৈসাবি’ পরিনত হয়েছে প্রাণের উৎসবে।