রবি. ফেব্রু ২৩, ২০২৫

গুইমারায় নতুন ভোটার হতে পারছেন না বাঙালিরা

নুরুল আলম:: গুইমারা, পার্বত্য চট্টগ্রাম: গুইমারা উপজেলায় ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভোটার নিবন্ধনে নানা বাধার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রের শর্তপূরণ করতে না পারায় অনেক যোগ্য ভোটার নিবন্ধন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র নং ১৭.০০.০০০০.০২৬.৩২.০১২.২৩.৩০৮ অনুসরণ করতে গিয়ে গুইমারার অনেক বাঙালি নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে, মুসলিম বাঙালি মহিলাদের ক্ষেত্রে কাবিননামা না থাকার কারণেও তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।

পরিপত্রের ‘বি’ ক্যাটাগরির ৩ ও ৪ ক্রমিকে বাবা-মায়ের (AFIS) এবং স্থায়ী বাসিন্দার সনদ চাওয়ায় অনেকের জন্য জটিলতা তৈরি হয়েছে। অনেক নতুন ভোটার আগ্রহী হলেও এই শর্তের কারণে নিবন্ধন করতে পারছেন না।

বড়পিলাক গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী সখিনা আক্তারের পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার পরেও কাবিননামা না থাকায় বড়পিলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক চাইথোয়াই মারমা তাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক চাইথোয়াই মারমা কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিয়ে শুধু বলেছেন যে ভোটার নিবন্ধন কাজ চলমান রয়েছে।

এছাড়া, পরিপত্র অনুযায়ী ভোটার নিবন্ধনের জন্য মৌজা প্রধান (হেডম্যান) এর সনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। কিন্তু গুইমারা উপজেলার কয়েকটি মৌজায় হেডম্যানদের নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বড়ইতলী মৌজার বাসিন্দা দুলাল হোসেন জানান, “আমরা আমাদের হেডম্যানকে পাই না, যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছি। হেডম্যান সকলেই উপজাতি হওয়ায় আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।” একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন ২০৯ নং বড়পিলাক ও ২২৭ নং হাফছড়ি মৌজার বাঙালি বাসিন্দারা।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ নিতে কমপক্ষে এক মাস সময় লেগে যায়, কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় প্রয়োজন হয়। জমির কাগজ না থাকলে মং রাজা স্থায়ী বাসিন্দা সনদ দেন না, ফলে অনেক বাঙালি ভোটার হতে পারছেন না।

গুইমারাসহ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে ভোটার হালনাগাদ ও নতুন ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে সহজ করার লক্ষ্যে পরিপত্রের ৩ ও ৪ ক্রমিক বাদ দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দল ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নির্বাচন কমিশনে পত্র প্রেরণ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

এ বিষয়ে গুইমারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তপন চন্দ্র দাস জানান, “ভোটার নিবন্ধন সহজীকরণের জন্য নির্বাচন কমিশন গত ২৩ জানুয়ারি একটি বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে, যেখানে আংশিক সহজীকরণের কথা বলা হয়েছে। তবে, স্থানীয় মৌজা প্রধানের (হেডম্যান) সনদের বাধ্যবাধকতা এখনো বহাল রয়েছে।”

ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এই জটিলতা নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বাঙালিরা।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!