কমিশন বাণিজ্য,পছন্দের ঠিকাদারকে নিম্নদরের দরপত্রে উচ্চদরে কার্যাদেশ দেয়া,কাজ না করেই বিল উত্তোলন,সরকারি অর্থ নয়-ছয়,ভাগবাটোয়ারা অভিযোগ পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক,খাগড়াছড়ি:: তিনিই এক কর্মকর্তা যিনি কিনা কারো ধার ধারেন না। শুধু মাত্র ছয়-নয়,ভাগ-বাটোয়ারা,যোগসাজশ আর কমিশন বাণিজ্যকে পুঁজি করে পকেট ভারী হয় এই প্রকৌশলীর। অনিয়ম-দুর্নীতিই তার অবৈধ অর্থের মুল উৎস। এমন দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পানছড়িতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাসের বিরুদ্ধে।
নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়ে কমিশন বাণিজ্য, নিম্নদরের দরপত্র আহ্বান করে উচ্চদরে কার্যাদেশ দেয়া, কাজ না করেই বিল উত্তোলন, ঠিকাদারদের যোগসাজশে সরকারি অর্থ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নতুন কোন ঘটনা নয়। তারপরও তার দাপটে অস্থির স্থানীয় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরসহ পানছড়ি উপজেলার ঠিকাদাররা।
সম্প্রতি পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাসের এ ধরনের একাধিক অভিযোগে এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সচিব,দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী অসহায় বেশ কয়েকজন ঠিকাদার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘১৯-২০ অর্থ পানছড়ি উপজেলায় পিইডিপি-৪ এর আওতায় ৬টি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, ৫টি বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
প্রথম শ্রেণীর বেশ কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে নিম্নদরের দরপত্রে কাজ পাওয়ার পরও তা আবার বাতিল করে স্থানীয় সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশে অন্য ঠিকাদারকে তা আবার ৫ শতাংশ উচ্চদরে কার্যাদেশ অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেন। সে সাথে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করে। এর প্রতি স্কুল নির্মাণ বাবদ ৬ লক্ষ টাকা করে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলা প্রকৌশলী।
একইভাবে ৫টি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ১০ শতাংশ উচ্চদরে কার্যাদেশ দিয়ে ঘুষ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা উপজেলা প্রকৌশলীর পকেটে যায়। নিম্নদরে কাজ উচ্চদরে কার্যাদেশ দিলেও এই সংক্রান্ত সভা করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। এতে সরকারি কোষাগারের বিপুল অর্থ গচ্চা যাচ্ছে।
এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুর রহমানকে সদস্য সচিব হিসেবে দেখানো হয়েছে অথচ চার বছর আগে পানছড়ি থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন তিনি। স্থানীয় প্রভাবশালী এক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব অনিয়ম করে যাচ্ছে উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস। নিম্নদরের কাজে উচ্চদরে কার্যাদেশ দেওয়ার কারণে সরকারি অর্থ নয়-ছয় হচ্ছে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, বাড়িতে বসেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন তিনি। টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াও পানছড়ি উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের কাজে ব্যাপক অনিয়ম দৃশ্যমান।
পানছড়ি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় গত দুই অর্থবছরে মানিক্য পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ, তবলছড়ি রাস্তায় বল্লি প্ল্যাইনাডিং, সাঁওতাল পাড়ায় রাস্তার রক্ষার জন্য সাইড ওয়াল নির্মাণ,পুকুর খনন, সেচ ড্রেন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া জিএসআইডিপি প্রকল্পের ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলা মসজিদ নির্মাণ, প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুইটি বিদ্যালয়ে ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে বাকি টাকা ঠিকাদারের যোগসাজশে উপজেলা প্রকৌশলী নিজে আত্মসাৎ করেন।
স্থানীয় ঠিকাদার ও পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সরকারি অর্থের নয়-ছয় করেছেন। সম্প্রতি স্কুল ভবন নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দরপত্র নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম সহ নিম্নদরের একটি কাজ আরো ১০ শতাংশ বেশি দিয়ে এক ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেন তিনি। এতে সরকারি বিপুল অর্থ গচ্চা যাবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অনিয়মের বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে লেখালেখিও হয়েছে এবং বিভিন্ন দপ্তরেও গেছে। বর্তমানে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং তদন্তে বাস্তবতা বের হয়ে আসবে বলে দাবী করেন পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস।
এদিকে উপজেলা প্রকৌশলীর অনিয়মের দায় অধিদপ্তর নিবে না বলে সাফ জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী। সে সাথে তিনি আরো বলেন, পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এসব বিষয় তদন্ত করে দেখার জন্য সিনিয়র এক প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।