বিশেষ প্রতিবেদন :: খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন যাবৎ চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়। এ ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এলাকায় কর্মরত সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে গেলে সত্যতার প্রমান পান। স্থানীয় সাংবাদিকগণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখতে পান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফ্লোরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের বেশ কিছু মূল্যবান ঔষধ ও অন্যান্য সরঞ্জাম বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে চাইলে- তিনি জেলায় মিটিংয়ে আছেন বলে জানান চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী।
সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা রীতিমতো কর্মস্থলে আসেন না, মাঝেমধ্যে আসলেও বেলা ১১ টায় এসে ১২ ঘটিকায় প্রস্থান করেন। স্থানীয় এবং জেলার সাংবাদিকগণ একাধিকবার বিভিন্ন তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেও, উনাকে না পেয়ে ফেরত আসেন। উল্লেখিত কর্মকর্তা চলতি সপ্তাহেও বুধবার পর্যন্ত সময়ে তিন দিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে কোন তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উনার নিয়োজিত মুখপাত্র সুরেশ বাবুর সাথে যোগাযোগ করতে। এছাড়াও নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে জানা যায়, করোনাকালীন স্বাস্থ্য বিভাগ হতে প্রদত্ত মহালছড়ি উপজেলার দূর্গত মানুষের মাঝে বিতরণের জন্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে তিনি পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় নেন। অথচ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের বেলায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা উচিত ছিলো বলে তথ্যসূত্রে উল্লেখ করেন।
স্থানীয় উপজেলা পরিষদের মিটিং ও সভায় উপস্থিত থাকাটা যে উনার দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, এটারও তোয়াক্কা করেন না উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই কর্মকর্তা। বুধবার (০৭ অক্টোবর) উপজেলা কার্যালয়ে মিটিং ছিলো, কিন্তু তিনি মিটিংয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের এডভোকেসি, ওরিয়েন্টেশন, ওয়ার্কশপ সভাগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, হেডম্যান, কার্বারী, সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাগণের উপস্থিতি ছাড়াই এসব সভা সমাবেশগুলো তিনি নিজেদের কর্মচারী বা নিজস্ব লোক দিয়ে সম্পন্ন করেন। এছাড়াও সরকার এলাকায় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তা এলাকাবাসীর যে জানার অধিকার রয়েছে সে বিষয়টারও তোয়াক্কা করেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর আছে বলে জানা গেলেও এলাকায় তার কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চাকুরীরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীগণ দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় চাকুরি করার ফলে এরা এখানে শিকড় গেড়ে বসেছেন। অনেকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জায়গা জমি দখল করে বাড়ি স্থাপনা নির্মান করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কোন কোন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী স্থানীয়ভাবে ক্ষমতা ও দাপট দেখায়। হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। যেমন ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব পালন করে অন্য কর্মচারী। টিকেট ও টোকেন দেয়ার বেলায়ও সুইপার-ঝাড়ুদার দায়িত্ব পালন করে থাকে।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মস্থলে না এসে বছরের পর বছর বাড়িতে বসে বেতন ও টিএডিএ ভোগ করছে বলে জানা যায়। করোনাকালীন ও বর্তমান সময়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ফ্লু কর্ণার করা হলেও, তা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়াও আরো বহূ অনিয়মের কথা শোনা যায় যার রহস্য বেরিয়ে আসবে গোপন তদন্তের মাধ্যমে।
এই বিষয়ে মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, হসপিটালে স্টোর রুম না থাকায় ঔষধ পত্র আপাতত বারান্দায় রাখা হয়েছে।