দিবানিশি প্রকাশ্যে এখানে বসে মাদকের হাট
নুরুল আলম: অপরূপ সৌন্দর্য্যের সবুজ পাহাড়ে এখন দিবানিশী বসে মাদকের হাট। এ যেন এক মাদকের নীরব সম্রাজ্য। যেখানে হাত বাড়ালেই মেলে প্রাণঘাতি মাদক ইয়াবা,গাঁজা,ভারতীয় বিভিন্ন নামিদামী ব্রান্ডের মদ থেকে শুরু করে দেশীয় তৈরী মদ পর্যন্ত।
অপরাধের সম্রাজ্য পেঁতে বসলেও সে নাকি চলে সকলকে ম্যানেজ করে। প্রশাসন,আঞ্চলিক সংগঠন থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিকের নাম ব্যবহার করে প্রকাশ্যে মহিলা কলেজ পেরিয়ে ভুয়াছড়ি সড়কের আপার পেরাছড়া বাজারের পাশেরই দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে চালিয়ে আসছে মাদকের বার। এ যজ্ঞ নিয়ন্ত্রণ করেন অংগ্য মারমা (৩৬) নামের এক যুবক।
রাতের রঙিন নেশার হাতছানী নয় শুধু, প্রকাশ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মতো এমন মাদকের স্পর্ট থাকায় ভয়াল ধ্বংস লীলার পথে হাটছে স্থানীয় উঠতি বয়সের শিক্ষার্থী,ব্যবসায়ী,পরিবহণ শ্রমিক থেকে শুরু করে যুব সমাজসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
যুব সমাজ ধ্বংস করে চললেও এ অপরাধের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময়েও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রশ্ন উঠছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধেও। এ চক্র প্রভাবশালী হওয়ায় আর অবৈধ মোটা অঙ্কের অর্থের ফলে সে ও তার সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারীরা অসহায় বলে দাবী স্থানীয়দের।
অন্যদিকে এফএনএফ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট নামে এ মাদকের সম্রাজ্য খুলে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে গেলেও ঘুমিয়ে আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো,দাবী স্থানীয়দের। এছাড়াও এ রেস্টুরেন্টে বাহিরে থেকে আসা পর্যটকদেরও নেশার কন্টাক্ট নেয়া থেকে শুরু করে চুক্তিতে অনৈতিক কাজ কর্মেরও অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
পার্বত্য জেলা পেরিয়ে এ সিন্ডিকেট চক্র বান্দরবান ও বক্সবাজার,চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন অভিনব কায়দায় নিয়ে আসে মাদকের চালান। পরে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে স্থানীয় স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। এদিকে ইয়াবাসহ ভারতীয় নানা ব্রান্ডের মদ রামগড়সহ অরক্ষিত সিমান্তে দিয়ে বিকল্প পথে তাদের হাতে আসে। বছরের পর বছর দীর্ঘ সময় মাদকের এমন স্পর্ট থাকলেও ব্যবস্থা না নেয়া নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
সচেতন সমাজের দাবী,পর্যটন শহর খাগড়াছড়ির শহরতলীর নিকটবর্তী এলাকায় এমনি মাদক বেঁচাকেনার হাট যুব সমাজ ধ্বংসের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মুল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও সামাজিক অবক্ষয়ের বিস্তারের আগেই এ ধরনের স্পর্ট বন্ধ করা না গেলে বাড়বে মাদক কারবারীদের উৎপাত। উৎসাহিত হবে অপরাধ ও অপরাধীরা।
স্থানীয় যুবক ইব্রাহীম খলিল বলেন, এমন মাদক কারবারীদের কারনে সমাজ ধ্বংস হচ্ছে দেশ ও সমাজ। ধ্বংসের পথে হাটছে উঠতি বয়সি শিক্ষার্থী,কিশোর-কিশোরীরাও। অচিরেই এমন অপরাধ বন্ধ করা না হলে বাড়বে অপরাধ। এসব অপরাধ ও অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের হস্থক্ষেপ দাবী করেন তিনি।
মাদক হাটের প্রধান এফএনএফ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এর নিয়ন্ত্রক অংগ্য মারমা বলেন, সকলকে ম্যানেজ করে আমি এখানে ব্যবসা চালাচ্ছি। কেউ বাদ নেই যারা এখান থেকে টাকা পায় না। নইলে আমি কিভাবে ব্যবসা করি এমনী প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এখানে বড় বড় লোক যুক্ত আছে বলে জানিয়ে হুংকার ছেড়ে এ অবৈধ যজ্ঞে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দিয়ে প্রতিবেদককে কথার কৌশলে নিউজ না করতে হুমকি দেন।
খাগড়াছড়ি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর উপ-পরির্দশক মো: জাকির হোসেন বলেন, খাগড়াছড়র আপার পেরাছড়া এলাকার এফএনএফ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এ অভিযান ও নিয়ন্ত্রক অংগ্য মারমার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ সালের ৩৬/১ এর ১০(ক) ধারায় বিগত ২০২৩ সালের ১৪ মে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি মামলা হয় করা হয় বলে তিনি জানান। যার নং ০৬। সে অভিযানে ৫০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয় বলেও তিনি জানান।
দীর্ঘ সময় ধরে মাদকের ঘাঁটি গেড়ে বসা এমন অপরাধীদের বিষয়ে তিনি আরো জানান,পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবসা নেয়া যাচ্ছে না। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়ার পর সে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসে আবারো কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানান।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি মো: তানভীন হাসান বলেন,কোন মাদক কারবারীদের ছাড় নয়। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।