শিরোনাম
রবি. ফেব্রু ২৩, ২০২৫


ডেস্ক রির্পোট: সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতির ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত সংলাপ ও গঠনমূলক বিতর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাস সাক্ষী যে, যুক্তিনির্ভর আলোচনার মাধ্যমেই অনেক জাতি তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিমণ্ডলে এই প্রথা আজ অপব্যবহারের শিকার। যুক্তিসঙ্গত আলোচনা, পর্যালোচনা ও সমাধানমূলক বিতর্কের পরিবর্তে অহেতুক অতর্ক, কুতর্ক ও অপ্রাসঙ্গিক বিতণ্ডাই অধিক স্থান পাচ্ছে। ফলে দেশের জরুরি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাবিষয়ক সমস্যাগুলোর সমাধানে যে সময়, সামর্থ্য ও শক্তি ব্যয় হওয়া উচিত, তা বরং অপ্রয়োজনীয় মতবিরোধ ও বাহুল্য বাকবিতণ্ডায় নষ্ট হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে এই বিতর্ক কেবল বিভ্রান্তিই ছড়াচ্ছে না, বরং জনগণের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে দুর্বল করে তুলছে। এর সুযোগ নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা, যারা জনস্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। এতে করে প্রকৃত সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং দীর্ঘসূত্রতায় বাস্তবিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। ফলস্বরূপ, সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র ক্রমেই বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

সংগত কারণে আলোচনার গভীরে প্রবেশের আগে আমাদের বোঝা দরকার অতর্ক, বিতর্ক ও কুতর্কের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী। অতর্ক এমন এক ধরনের আলোচনা, যা পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই বা উদ্দেশ্যহীনভাবে শুরু হয় এবং যার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য থাকে না। এটি প্রাসঙ্গিকও হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা শুধু সময়ের অপচয় এবং আবেগপ্রসূত মতামতের অযথা বিনিময়ে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু কুতর্ক একধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাকযুদ্ধ, যেখানে মূল লক্ষ্য থাকে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা, সত্য উদঘাটন বা সমস্যার সমাধান নয়। অন্যদিকে বিতর্ক হলো সুসংগঠিত ও যৌক্তিকভাবে উপস্থাপিত দ্বিমত, যা তথ্য-উপাত্ত, তত্ত্ব ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয় এবং যা বুদ্ধিবৃত্তিক সমৃদ্ধি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্লেটোর ‘ডায়ালগ’ এবং এরিস্টটলের ‘রেটোরিক’-এ যুক্তির কাঠামো ও সঠিক বিতর্কের আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, বিতর্ক যদি সত্যের অনুসন্ধানে পরিচালিত না হয়, তবে তা বিভ্রান্তি ও ভ্রান্ত ধারণা তৈরির মাধ্যম হয়ে ওঠে।

রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নতির জন্য যেখানে যৌক্তিক বিতর্ক অপরিহার্য, সেখানে অপ্রয়োজনীয় অতর্ক এবং কুতর্ক কেবল বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করে না, বরং বিভাজনও বাড়িয়ে তোলে। ফলে নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যন্ত সবকিছু এক প্রকার মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার ও আবেগনির্ভর বিভ্রান্তির শিকার হয়ে যায়। জনশিক্ষার মাধ্যমে যদি মানুষকে যুক্তির চর্চা, গঠনমূলক সংলাপ এবং প্রকৃত সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি শেখানো যায়, তবে এই নেতিবাচক প্রবণতাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

নৈতিক ও যৌক্তিক বিতর্কের বিপরীতে অতর্ক ও কুতর্কের প্রাধান্য ইতিহাসে বহুবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে। প্রতিবারই দেখা গেছে যে, যুক্তিকে অবহেলা করে অতর্ক বা কুতর্ককে প্রশ্রয় দিলে একটি জাতির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যখনই কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র সমস্যার প্রকৃত সমাধান এড়িয়ে অতর্ক বা কুতর্কে লিপ্ত হয়েছে, তখনই তারা পিছিয়ে পড়েছে। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস যুক্তিনির্ভর প্রশ্ন ও সংলাপের মাধ্যমে সত্যের অনুসন্ধান করতেন, যা ‘সক্রেটিক মেথড’ নামে পরিচিত। তবে গ্রীসের তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা তার মুক্তচিন্তাকে হুমকি হিসেবে দেখে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর পরিণতিতে গ্রীসে মুক্তচিন্তার পরিসর সংকুচিত হতে থাকেএবং একসময় তারা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পতনের দিকে ধাবিত হয়।

ঠিক একইভাবে ইউরোপের অন্ধকার যুগে গির্জার নেতৃত্বাধীন কুতর্কের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও জ্ঞানের বিকাশ দমন করা হয়েছিল। কপর্নিকাস ও গ্যালিলিওর মতো বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারগুলো গির্জার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, ফলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর ফলে ইউরোপ শতাব্দীর পর শতাব্দী বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতিতে পিছিয়ে পড়ে, যা ইউরোপের ইতিহাসে “অন্ধকার যুগ” (ডার্ক এজ) নামে পরিচিত। তবে রেনেসাঁ এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মাধ্যমে যুক্তিবাদ ও গবেষণার পুনরুজ্জীবন ঘটে, যার ফলে ইউরোপ নতুন করে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় এবং আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি গড়ে ওঠে। এই ঐতিহাসিক শিক্ষা আমাদেরকে শেখায় যে, কুতর্ক ও যুক্তিহীন বিতণ্ডা কোনো জাতির উন্নতির পথ নয়; বরং মুক্তবুদ্ধির চর্চা, যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও গবেষণাই সত্যিকারের সমাধানের পথ সুগম করে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেযেখানে এখনো অনেক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সেখানে যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য। জনশিক্ষার মাধ্যমে যদি সমাজে যুক্তিনির্ভর আলোচনার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়, তাহলে আমরা অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক ও বিভ্রান্তি এড়িয়ে বাস্তব সমস্যাগুলোর সমাধানে মনোনিবেশ করতে পারব। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, যে জাতি সত্য ও জ্ঞানের আলো অনুসরণ করে, সেই জাতিই উন্নতির শিখরে পৌঁছায়। আমাদেরও উচিত অহেতুক বিতর্ক ও কুতর্ককে পরিহার করে বাস্তবিক সমস্যার সমাধানে একযোগে কাজ করা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানকে অগ্রাধিকার দিতে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

১. বর্তমান সময়ে আমাদের জাতীয় জীবনে কুতর্কের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় রাজনৈতিক পরিসরে, যেখানে যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে একে অপরকে দোষারোপ করাই প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নীতি নির্ধারণ, প্রশাসনিক জবাবদিহি এবং সমাধানমুখী বিতর্ক থাকা উচিত। অথচ বাস্তবে দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দায় স্বীকার না করে সব সমস্যা প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে দেয়, ফলে অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব, দুর্নীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সংকটের মতো বাস্তব সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে। ইতিহাস বলছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন সংকট সমাধানের পরিবর্তে অতর্ক ও কুতর্কে ব্যস্ত থাকে, তখন রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রোমান সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অকার্যকর নীতি নির্ধারণ। সাম্প্রতিক বিশ্বেও দেখা যায়, যেখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি যুক্তিনির্ভর ও জনমুখী, সেখানে উন্নয়ন দ্রুত হয়; আর যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কেবল একে অপরকে দোষারোপ করে, নানান চালাকলায় ক্ষমতায় যেতে চায়, সেখানে স্থবিরতা ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা, কার্যকর নীতি নির্ধারণ এবং যৌক্তিক বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। রাজনীতিকে যদি সত্যিকারের জনসেবার হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলা হয়, তাহলে রাজনৈতিক বিভাজনের পরিবর্তে সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এজন্য সুস্থ রাজনীতির চর্চা বাড়াতে জনশিক্ষার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি, যাতে তারা কুতর্ক ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের ফাঁদে না পড়ে বরং ভোটের সময় প্রার্থী দলবানির নির্বাচনের জন্য যুক্তি ও তথ্যনির্ভর বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

২. ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন তথ্যপ্রবাহকে দ্রুত ও সহজলভ্য করেছে, তেমনি এটি কুতর্ক ও গুজবের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিশেষত, যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য প্রচার এবং আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়ার ফলে বিভ্রান্তি ও বিভাজন বাড়ছে। অনেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে অর্ধসত্য বা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং নীতি নির্ধারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে সত্য-মিথ্যার সীমানা ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ প্রশস্ত করছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, তথ্যের অপব্যবহার একটি জাতির অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, ১৯৩০-এর দশকে নাৎসি জার্মানিতে গণমাধ্যমকে প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছিল, যার ফলে একটি সমগ্র জাতি ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বর্তমান বিশ্বেও দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত তথ্য যাচাই-বাছাই করে মত প্রকাশ করা এবং আবেগের চেয়ে বাস্তবসম্মত যুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া। জনশিক্ষার মাধ্যমে তথ্য-নির্ভর বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার চর্চা বাড়ানো গেলে এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। গণমাধ্যম ও শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়িয়ে মানুষকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বোঝার দক্ষতা দেওয়া যেতে পারে। তবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভ্রান্তি তৈরির বদলে একটি ইতিবাচক আলোচনার ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।

৩. একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। কারণ শিক্ষাই জাতির জ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি। কিন্তু আমাদের দেশে গবেষণা ও বাস্তবমুখী শিক্ষার চর্চার পরিবর্তে অপ্রয়োজনীয় তর্ক-বিতর্কেই অধিক সময় ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যেখানে নতুন জ্ঞান ও দক্ষতা সৃষ্টির কেন্দ্রস্থল হওয়ার কথা, সেখানেও অনেক ক্ষেত্রে সত্য অনুসন্ধানের পরিবর্তে মতাদর্শিক বিভক্তি ও কুতর্কের প্রবণতা বাড়ছে। একাডেমিক চর্চার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নতুন জ্ঞান, দক্ষতা ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নেওয়া। অথচ বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষাঙ্গন মতাদর্শগত বিতর্ক, দ্বন্দ্ব ও বিভাজনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষাকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে নতুন জ্ঞান, দক্ষতা ও সুযোগ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে ফিনল্যান্ড, জার্মানি বা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বলা যায়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মতাদর্শগত কুতর্কে সময় নষ্ট না করে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করা হয়। অথচ আমাদের দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণার পরিবেশ গড়ে না ওঠায় শিক্ষার্থীরা বাস্তব জ্ঞানার্জনের পরিবর্তে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে, যা তাদের একাডেমিক উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন গবেষণামুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। জনশিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে, বিতর্ক তখনই অর্থবহ হয় যখন তা নতুন জ্ঞানের দ্বার উন্মোচন করে, কেবল মতাদর্শের সংঘাত তৈরি করলে তা অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে চাইলে শিক্ষাব্যবস্থাকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মূল লক্ষ্য হবে বাস্তব সমস্যার সমাধান ও সমাজের উন্নয়ন।

রাষ্ট্রের উন্নতি ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য যৌক্তিক বিতর্ক ও সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। অতর্ক, কুতর্ক ও বিতর্কে সময়, সামর্থ্য এবং শক্তির অপচয় না করে আমাদের উচিত যৌক্তিক চিন্তা ও বাস্তবধর্মী দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান খোঁজা। এর জন্য একটি সমন্বিত ও জ্ঞানভিত্তিক আলোচনা প্রক্রিয়া প্রয়োজন, যেখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে তথ্য, গবেষণা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে। সমাজের প্রতিটি স্তরে সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আমরা একটি সুশৃঙ্খল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র নির্মাণের পথকে সুগম করে তুলতে সক্ষম হবো। তাই আসুন অহেতুক অতর্ক, কুতর্ক ও বিতর্ক বাদ দিয়ে দ্রুত বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানের পথে এগিয়ে যাই, যেখানে সকলের মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একত্রে কাজ করার মনোভাব তৈরি করি। তখন রাষ্ট্রীয় আদর্শ ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’কে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সুষ্ঠু ও গঠনমূলক পরিবেশে নানা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যার সমাধান করতে পারব এবং গঠনমূলক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারব।

লিখেছেন: ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!