ডেক্স,দৈনিক কক্সবাজার,জসিম মাহমুদ:: টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে অপহরণের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি দিনমজুর আব্দুল আলীর কিশোর ছেলেকে অপহরণ করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। পরে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। অনেক চেষ্টার পর, পরিবারের সদস্যরা ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।
অপহরণের বিস্তৃতি
স্থানীয়দের মতে, অপহরণের ঘটনা টেকনাফের জন্য নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, গত এক বছরে ১৯৩ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৯১ জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং বাকিরা রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুক্তিপণ দিয়েই ফিরে আসতে হয় অপহৃতদের।
অপরাধীদের পরিচয়
অপহৃতদের ভাষ্যমতে, এসব অপহরণের সঙ্গে বেশিরভাগই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জড়িত। অপহরণকারীদের কাছে রোহিঙ্গা শিবির থেকে রান্না করা খাবার আসত, যা তাদের রোহিঙ্গা পরিচয় নিশ্চিত করে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃতদের সন্ধান করা হচ্ছে। এক বছরে ১৯টি মামলায় ২৯ জন অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে এবং ৬০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের পরিবার বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুক্তিপণ দিয়েই ফিরে আসতে হয়েছে অপহৃতদের।
বনকর্মীদের আতঙ্ক
সম্প্রতি ১ জানুয়ারি টেকনাফের জাদিমোড়া পাহাড়ে বনবিভাগের ১৮ কর্মী ও শ্রমিক অপহরণের শিকার হন। অপহৃতদের রাতভর নির্যাতন চালিয়ে তাদের পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এ ঘটনার পর বনবিভাগের শ্রমিকরা আতঙ্কে কাজ করা বন্ধ রেখেছেন।
স্থানীয়দের উদ্বেগ ও দাবিসমূহ
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা মনে করেন, শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। পাহাড়ি এলাকায় সেনা অভিযানের দাবি জানিয়েছেন বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর আহমদ আনোয়ারী।
টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান সিদ্দিকী বলেন, “শক্ত হাতে অপহরণকারীদের দমন করতে হবে। পাহাড়ি এলাকায় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান প্রয়োজন।”