নুরুল আলম:: খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগিদের থাকতে হচ্ছে বারান্দায় ও ফ্লোরে। হাসপাতালের শিশুদের চিকিৎসা সেবা অবস্থা আরো নাজুক। শিশুদের চিকিৎসা সেবা চলছে ধার করা ডাক্তার দিয়ে।হাসপাতালে নেই আইসিওসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ৯ উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষ। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও লংগদু থেকে আসা রোগীরাও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
২০১৯ সালে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে নির্ধারিত মেয়াদে নির্মাণ কাজ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
২০১৯ সালে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলেও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে তা শেষ হয়নি, যা স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে ২৫০ শয্যার দাবি থাকলেও হাসপাতালটি ১৯৯১ সালের জনবল ও ২০০৫ সালের ৫০ শয্যার অবকাঠামো দিয়ে চলছে। দৈনিক প্রায় ৬০০-৭০০ রোগীর চাপ থাকায় সেবার মান ক্রমেই নিম্নমুখী।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে সার্জারি এবং গাইনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও শূন্য। ফলে ছোট ধরনের অপারেশন ও সম্ভব হচ্ছে না এখানে এবং মাতৃত্বকালীন বা প্রসূতিসেবা এমনকি ঝুঁকি ডেলিভারিও সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে বর্হি-বিভাগের রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রদানেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট-সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি অনুমোদিত পদ কিছু থাকলেও অধিকাংশ পদই দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য হয়ে আছে। ফলে অপারেশনসহ দুর্ঘটনা কবলিত গুরুতর আহত রোগীদের প্রত্যন্ত উপজেলা থেকে আসে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে।
অবকাঠামো সংকটে সব চেয়ে বিপাকে পড়ছে শিশু রোগিদের নিয়ে। শিশু ওয়ার্ডে ১৫টি বেডের বিপরীতে ৭০/৮০ জনকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ফলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিশু ও নারী রোগিদের থাকতে হচ্ছে বারান্দায় ও ফ্লোরে।
পার্শ্ববর্তী উপজেলার হাসপাতাল থেকে ধার করে এনে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেমন, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নবজাতক, শিশু কিশোর রোগ বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন শিশু বিশেষজ্ঞ করছে ডাক্তার মুহাম্মদ ওমর ফারুক। তিনি মূলত: মাটিরাঙা চিকিৎসক। তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা সামাল দিতে আনা হয়েছে।
ডাক্তার মুহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, খাগড়াছড়ি আধুনিক হাসপাতালে শিশু রোগিদের চিকিৎসা সেবা সব চেয়ে নাজুক। হাসপাতালের আদর্শ স্পেশাল কেয়ার নিউর্বন ইউনিটে একজন কনসালটেন্ট ও ৮ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও সবগুলো পদশূন্য। এছাড়াও গড়ে প্রতিদিন ১০/১২ জন রোগী থাকলেও ফটোথেরাপি মেশিন রয়েছে মাত্র ৪টি।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রিপল বাপ্পি বলেন, চিকিৎসক, জনবল ও আবাসন সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জনবল ও আবাসন সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ছাবের বলেন, ২৫০ শয্যা খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের ভবনের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬০ ভাগ। ফলে কবে নাগাদ ২৫০ শয্যার ভবনে কাজ শুরু করা যাবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালের নির্মাণ কাজের ঠিকাদার সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার আস্থাভাজন এবং অন্যতম সুবিধাভোগী ও প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি নিজের খেয়াল-খুশিমতো নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
২৫০ শয্যার ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ সম্পন্ন না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার শহিদ তালুকদার বলেন, ১৯৯১ সালের অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাবে না।
ঠিকাদারের উপর চাপ প্রয়োগ করে হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ২৫০ শয্যার খাগড়াছড়ি সদর আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করবে এমন দাবি জেলাবাসীর।