নুরুল আলম:: ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য (পৃথিবীর কোন ভাষাই হারিয়ে যাবেনা) বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন, গুইমারা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা দুর্গম সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নে স্থাপন করেছে “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ভাষা শিখন কেন্দ্র, গুইমারা”। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর ২০২৪) খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ভাষা শিখন কেন্দ্র, গুইমারা”এর চলমান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনকালে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আরেফিন জুয়েল। এছাড়াও গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুল আমিন, গুইমারা সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ নাজিম উদ্দিন, গুইমারা প্রেসক্লাব সভাপতি নুরুল আলমসহ সরকারি বে-সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ ও বিভিন্ন সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
“ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ভাষা শিখন কেন্দ্র, স্থাপনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরী জানায়, এই ভাষা শিখন কেন্দ্র মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমা ভাষা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করবে। বর্তমানে উক্ত ভাষা শিখন কেন্দ্রে ৩০ জন মারমা ও ৩০ জন ত্রিপুরা ছাত্র-ছাত্রীতাদের নিজ ভাষা সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করছে। সিন্দুকছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভাষা শিখন কেন্দ্রে আনন্দের সাথে নিজেদের ভাষা পড়তে ও লিখতে শিখছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ভাষা শিক্ষার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবৃন্দ বর্তমানে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে শিক্ষার্থীদের মারমা ও ত্রিপুরা ভাষা সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করছেন। সরকার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে (১ম-৩য় শ্রেণীপর্যন্ত) বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় রচিত পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করলে ও দক্ষ শিক্ষক না থাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় তাদের মাতৃভাষার লিখিত রূপ সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে পারছেনা।
গুইমারা উপজেলায় স্থাপিত “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ভাষা শিখন কেন্দ্রের” মাধ্যমে মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমা ভাষার লিখিত রূপ সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে এবং বিলুপ্ত প্রায় ভাষা সমূহ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। ভাষা শিখন কেন্দ্রটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ৬মাস ব্যাপি কোর্স প্ল্যান ডিজাইন করা হয়েছে। মৌলিক ভাষা (লিখা ও পড়া) জ্ঞান সম্পর্কে দক্ষতা অর্জনের পরে শিক্ষার্থীদের সনদ বিতরণ করা হবে। চাকরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সনদের গ্রহণ যোগ্যতা নিশ্চিত কল্পে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
ভাষা শিখন কেন্দ্রটি দক্ষতার সাথে পরিচালনার নিমিত্তে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রধান শিক্ষক, সিন্দুকছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় এর যৌথ স্বাক্ষরে একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে। যার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে ভাষা শিখন কেন্দ্রটির সকল ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি (সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাষা) সংরক্ষণে সরকারের এ শুভ উদ্যোগ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছে এবং সাধুবাদ জানিয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতিরক্ষা ও পাহাড়ে চলমান অস্থিরতা কমাতে উপজেলা প্রশাসন, গুইমারার এই উদ্যোগ সহায়ক হতে পারে।