নুরুল আলম:: অনিয়মের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে গুইমারা উপজেলা। টাউন হল দখল, যাত্রীছাউনি অবৈধ দখল, ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে যেখানে সেখাটে দোকানপাট নির্মাণ, বানিজ্যি সেট পরিচালনায় অনিয়ম, পানি সাপ্লাইয়ে অনিয়ম, কোপারিটিবের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ নানান অনিয়ম আর অপরাধের আতুরঘর গুইমারা।
গুইমারার টাউন হলের জায়গায় শ্রমিকদের আবাসস্থল গড়ে তোলা হয়েছে। জানা যায়, গুইমারা বাজার চৌধুরী কংজরী চৌধুরী নিজেই টাউন হল দখল করে সেখানে নিজের ব্যক্তিগত মালামাল রাখাসহ বিভিন্ন লোকজনদের আবাস্থলে পরিণত করেন। এভাবে প্রতিষ্ঠানটির সরকারি মালামাল ক্ষয়-ক্ষতি হলেও নেই দেখার কেউ। এছাড়াও গুইমারা বাজারের দক্ষিণ পাশে ব্রীজের নিচে ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গাটিও কংজরী চৌধুরীর সহায়তায় দোকান ঘর নির্মাণ করে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে দেখা, গুইমারা বাজারের ফুটপাত দখলের চিত্র এখন একটি লক্ষণীয় বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। যত্রতত্র ফুটপাত দখল করে যেখানে সেখানে স্থাপনা ও টং দোকান নির্মাণ করে ফুটপাত দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। এসব অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের তান্ডবে স্থানীয়রা বিভিন্ন প্রকার সমস্যায় ভুগছেন প্রতিনিয়ত। ফুটপাত দখল করে কাঁচামালের বিভিন্ন পঁচা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে। আর সেই পঁচা আবর্জনা থেকে রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায় ও পথচারীদের মাঝে। তাছাড়া আসছে বর্ষার মৌসুমে এসব আবর্জনা থেকে বিভিন্ন বায়ু দূষিত রোগ ও ডেঙ্গু মশার প্রর্দূভাব দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এসব অসাদু ব্যবসায়ীদের মদদ দিচ্ছে বাজার চৌধুরী কংজরী চৌধুরী বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা আরো বলেন, গুইমারা ঐতিহাসিক সপ্তাহিত দুইদিন শনিবার (ছোট বাজার), মঙ্গলবার (বড় বাজার) বসে। বিশেষ করে এই দুইদিন দুর-দুরান্ত থেকে আসা পরিবহন গুলো বাজারের ফুটপাত দখল ও বেপরোয়া ভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যানযটের মধ্যে পরে, যার ফলে পথচারীদের চলাচলে ব্যাপক সমস্যার সম্মূখিন হতে হয়। এমনকি দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া গুইমারা সদরেই রয়েছে একটি মাদ্রাসা, ২টি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয় (কলেজ)। ফুটপাত দখলের জন্য স্কুল কলেজ ছুটি হলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই এসব ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় এলাকাবাসী।
গুইমারা বাজারের বিভিন্ন স্থান সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের প্রবেশমূখেই অবৈধ ভাবে তিনটি ফলের দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও তার পাশেই রয়েছে মুচির দোকান ও সবজি বিক্রেতাদের হিরিক। যার ফলে বাজারের প্রবেশ করতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় প্রশাসনিক ব্যক্তিসহ পথচারীদের।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় বেশকয়েকজন জানায়, যে যেভাবে পারছে ফুটপাত-রাস্তা দখল করে নিজেদের স্বর্গরাজ্য তৈরি করছে। আর এসব অবৈধকর্মকান্ড থেকে সুবিধা ভোগ করে বাজার কমিটি। যদিও জেলা পরিষদের অর্থায়নে তিন তলা বিশিষ্ট মাছ, মাংস, চাল ডাল ও সবজি বিক্রয়ের সেট নিমার্ণ করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত তিন তলা বিশিষ্ট সেটের নিজ তলায় মাছ বিক্রয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য দিলেও বাকী ২য় ও ৩য় তলা তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখেছে কোনো এক অদৃশ্য কারণে। বন্ধ থাকা ২য় ও ৩য় তলা মাংস ও সবজি বিক্রয়ের সেটটি দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানায় স্থানীয় জনসাধারণ।
এছাড়াও গুইমারা বাজারের যাত্রীছাউনীতে চারটি দোকান প্লট সরকারি অর্থায়নের নির্মাণ করা হলেও কংজরী চৌধুরী সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতাবলে মোটা অংকের জামানত নিয়ে ভাড়া দিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর। এই নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও কয়েক বছর পর পর দোকানগুলো নিলামে বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। যাত্রীছাউনীটি দ্রুত পূনসংষ্কারের দাবি জানায় আমজনতা।
জানা যায়, গুইমারা বাজার ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় পানি সরবরাহের ট্যাঙ্ক ও মোটর। কিন্তু এখান থেকে বাজার ব্যবসায়ীদের ঠিকমতো পানি পায়না বলে অভিযোগ করে বলেন, বাজারের জন্য নির্মিত পানির ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হলেও ঠিকমতো পানি পাওয়া যায়না। কিন্তু মাস শেষে পানির বিল দিতে হয় ঠিকই। এসব অনিয়মের শেষ কোথায় জানতে চায় অনেকেই।
পরিদর্শনে আরো জানা যায়, কোপারিটিপের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে বছরের পর বছর ভোগ করছে কংজরী চৌধুরীর নিকট আত্মীয়। এসব অনিয়ম দুর্নীতি থেকে চিরতরে মুক্তি চায় স্থানীয় সচেতন মহল ও বাজার ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি গুইমারা উপজেলা প্রশাসন গুইমারা বাজার পরিদর্শন কালে বিভিন্ন দোকানের সামনে ফুটপাত দখল করে ত্রিপলের ছাউনি টাঙিয়ে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করতে দেখে। পরক্ষণেই এসব ছাউনি সড়িয়ে নেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারী করে। কিন্তু অদ্যবদি পর্যন্ত এর কোনো কার্যক্রম কিংবাদ ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে এসব ব্যবসায়ীরা আরো ব্যপরোয়া হয়ে উঠেছে।
গুইমারায় কষাইখানার কোনো জায়গা না থাকায় কষাইখানা নির্মাণের জন্য গুইমারা দাখিল মাদ্রাসার পাশে এক পরিত্যাক্ত জায়গাকে নির্ধারণ করা হয়। সেখানে দ্রুত কষাইখানা নির্মাণের জন্য দাবি জানায় স্থানীয়রা।
অপরদিকে গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া এলাকায় হাফছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাহাড় কেটে পুলিশফাড়ি সংলগ্ন ধান্য জমিন ভরাট করে প্লট নির্মাণের পায়তারা করছে একটি দুষ্টচক্র মহল। দ্রুত এই দুষ্টচক্র মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন সচেতন মহল।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান এর সাথে ফুটপাত ও সড়ক ও জনপদের জায়গা দখলের বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গুইমারা ব্রিজের পাশে ড্রাম রাখার অভিযোগটি ইতিমধ্যেই পেয়ে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে সরেজমিনে পরিদর্শনের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। তার সাথে যোগাযোগ করার পরার্শম প্রদান করেন।
পরে গুইমারা উপজেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিপন চাকমার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই ব্রিজের পাশের জায়গাটি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে ড্রামসহ কিছু মালামাল রাখা দেখে ব্যবসায়ীদের এসব সরানোর নিদের্শ প্রদান করি এবং তাৎক্ষনাত তারা এসব সরিয়ে নেয়। পরবর্তিতে আবারো তারা ড্রাম রাস্তার পাশে রেখেছে। মূলত এসব ড্রাম প্রতিদিনই বিক্রয়ে হয়ে জায় তাই আজ থাকলে কাল থাকে না।’ গুইমারা যাত্রীছাউনি সামনে সওজের জায়গা দখলের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীছাউনী সামনে সড়কের জায়গা দখল করে ফলের দোকান নির্মাণের বিষয় আমি অবগত ছিলাম না। বিষয়টি এখনই জানতে পেরেছি। এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গুইমারা বাজারের অনিয়মের বিষয়ে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরী বলেন, ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একটি গণবিজ্ঞপ্তিজারী করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে গুইমারা উপজেলায় জায়গা সংকটের কারণে অদ্যবদি তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা এবং সমন্বয় প্রয়োজন। এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদকরণে সকলের সহযোগিতায় কামনা করেন তিনি।