“৫৩ বছরেও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ”
নুরুল আলম: পুলিশ-ছাত্রলীগ মিলে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সারাদেশে ৬ জনকে হত্যা ও আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল রাখার দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
সমাবেশ থেকে খাগড়াছড়ির সকল উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বুধবার (১৭ জুলাই ২০২৪) সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে চেঙ্গী স্কোয়ারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি শান্ত চাকমার সভাপতিত্বে ও পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তৃষ্ণাঙ্কর চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও দপ্তর সম্পাদক প্রাঞ্জল চাকমা। এসময় উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি কেমরন দেওয়ান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরেও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। যদি সত্যিকারে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হত তাহলে আজকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগ হামলা করার সাহস পেত না, সাধারণ শিক্ষার্থীরা হত্যার শিকার হত না এবং এদেশের পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহ সরকারি চাকরি নিয়োগে ৫% কোটা পুনর্বহালের জন্য আন্দোলন করার প্রয়োজন পড়তো না।
দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা না থাকার কারণে সভা-সমাবেশে ন্যাক্কারজনক হামলা হচ্ছে। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সরকারি ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের কারণে ভয়ে-আতঙ্কে অনিরাপদে জীবন কাটাতে হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকারের প্রধান শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনা না করে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে সারাদেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নগ্ন হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল পুলিশের গুলিতে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসহ আবু সাঈদসহ ছাত্রলীগে হামলায় সারাদেশে ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষক গুরুত্বর আহত ও সারাদেশে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন এবং পেশাগত কাজে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সরকার প্রধানের বক্তব্য ও পুলিশ-ছাত্রলীগের এমন ঘৃণ্য কার্যকলাপের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অবিলম্বে পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় শিক্ষার্থীসহ ৬ জনকে হত্যার ও সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তর মাধ্যমে জড়িতদের বিচারে আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, নিহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানসহ ১ম ও ২য় শ্রেণী সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবি জানান শান্ত চাকমা।
সমাবেশ থেকে তিনি, সারাদেশে পুলিশ-ছাত্রলীগ কর্তৃক হত্যা-হামলা ও সরকারি চাকরিতে ৫% কোটার দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলার সকল উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বন্ধ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান। বক্তারা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ সারাদেশে নারীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃসংস হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সরকারে দমন-পীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।