নুরুল আলম:: স্বীয় কর্মস্থল মাদ্রাসায় অনিয়মিত উপস্থিত প্রায় দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় প্রতিদিন দেওয়া আছে উপস্থিতির স্বাক্ষর। আবার প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ও স্বাক্ষরও এক সাথে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বেতন বিলের সিটেও নিয়মিত দেওয়া আছে স্বাক্ষর। আর সেই বিল উপস্থাপন করে ব্যাংক থেকে প্রতি মাসের বেতন উত্তোলন করা হয়। পুরো বিষয়টি মাদ্রাসার সুপার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জানলেও অজানা কারণে নেয়নি কোনো ব্যবস্থা। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ঘটেছে এমন ঘটনা।
অভিযুক্ত শিক্ষক বুলবুল আহম্মদ এর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর সদরে। তিনি তবলছড়ি ফাজিল মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। তার শিক্ষক ইনডেক্স নাম্বার (M0032015)। তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সাল থেকে এই মাদরাসায় যোগদান করেন।
জানা যায়, ফরিদপুরে “আইডিয়াল ট্রেনিং সেন্টার” নামে বিভিন্ন দেশের ভাষা শিক্ষার একটি কোচিং সেন্টারে শেয়ার হোল্ডার তিনি। সেখানে সময় দিতে গিয়ে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকেন বলে জানা যায়।
নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে নিয়মিত মাসের প্রথম দিকে এসে বেতন নিয়ে যান এবং পুরো মাসের উপস্থিতি স্বাক্ষর এক দিনে করে যান।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি এফতেদায়ী থেকে পর্যায় ক্রমে দাখিল উন্নীত হয়ে ১৯৯৭ সালে দাখিল ও ২০২২ সালে আলিম পর্যায় এমপিও ভুক্ত হয়। একই সাথে ২০২২ সালে ফাজিল (ডিগ্রি)দর পাঠদানের অনুমোদন হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক স্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এফতেদায়ী (প্রাথমিক) থেকে ফাজিল (ডিগ্রি) পর্যন্ত মোট শিক্ষক রয়েছে মাত্র ১৫ জন। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক (সুপার) সাইফুল ইসলাম নিজামী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) শাখার ইংরেজি শিক্ষক বুলবুল আহাম্মদ মাদ্রাসা অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। এ ব্যাপারে তাকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে তাকে শোকজ করে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে বললেও কোন লিখিত প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক বুলবুল আহাম্মাদ মুঠো ফোনে জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে ম্যানেজিং কমিটি ও সুপারের অনুমতি ক্রমে আমি অনুপস্থিতি রয়েছি। ফরিদপুরে “আইডিয়াল ট্রেনিং সেন্টার”র শেয়ারের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কয়েকজন বন্ধু মিলে ট্রেনিং সেন্টারটি করেছেন। তবে এটার সাথে মাদ্রাসায় অনুপস্থিতির কোন সম্পর্ক নেই। ট্রেনিং সেন্টার চালানোর জন্য অন্য লোক রয়েছে বলে জানান তিনি।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সোলেইমান লিডার জানান, তাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। ইতিপূর্বে শোকজ করারও হয়েছে। তার পরও ঠিক না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবলছড়ি ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ সমস্ত নিউজ করে কোন লাভ হবে না। বরং আপনি উল্টে বিপদে পড়বেন। শিক্ষক না থাকলেও প্রতিদিন হাজিরা ঠিকই হয়ে যায়। এ ঘটনার পিছনে রাগব বোয়াল রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান তিনি।