শিরোনাম
সোম. ডিসে ২৩, ২০২৪

কষ্টের জীবন পাল্টে দিল ইচ্ছাশক্তি

নুরুল আলম:: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ি থেকে লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (খঊউচ) এর ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে বিদেশী ক্লায়েন্ট এর কাজ করে সুমন কান্তি দাশের মাসে আয় ৮ লাখ টাকা। সুমন পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি জেলার পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ড’র আনন্দনগর এলাকার বাসিন্দা।

সুমন কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ফটোকপি দোকানে কাজ করতেন। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর অবস্থা খারাপ হয়ে পরেছিলো। তখন সারাদিনে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা কাজ করার পর প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ইনকাম করেছেন। অনেক কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছিলো। সেই সুমন কান্তি দাশ এখন ঘরে বসেই মাসে গড়ে আয় করেন প্রায় ৮ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার হিসাবে তা ৮ লাখ টাকার বেশি।

গত ২০২১ সালে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও ২০২৩ সালে এলইডিপি এর পক্ষ থেকে সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং ২০২৪ সালে আইটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার ও সফল আইটি প্রশিক্ষক হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন।

সফল ফ্রিল্যান্সার সুমন কান্তি দাশের সঙ্গে বিস্তারিত কথা হলে তিনি জানান, কীভাবে একজন সফল মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করার কারণে ফ্রিল্যান্সিং এর বিষয়ে অনেক শুনতাম কিন্তু কোনোদিন ভালো কোনো সুযোগ এর কথা জানতে পারিনি। আমার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আমি জানতাম না কি করে সঠিক ভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হয়। অনেক কিছু করার ইচ্ছে ছিল,অনেক স্বপ্ন ছিলো, জীবনে ভালো কিছু করার জেদ ছিলো কিন্তু সঠিক কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

আমার বন্ধু একদিন আমাকে খঊউচ এর কোর্স এর বিষয়টি জানালো। আমি জানতে পারলাম সরকার বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স দিচ্ছে। এরপর আমি ২০২০ সালে খঊউচ তে ডিজিটাল মার্কেটিং এ আবেদন করি। পরীক্ষা দেয়ার পর আমি নির্বাচিত হই। ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করা শুরু করি।

আমি কোর্স শুরু করার এক মাসের মধ্যে অনলাইন মার্কেটপ্লেস টঢ়ড়িৎশ থেকে কাজ পেয়ে ইনকাম করা শুরু করি। এখন পর্যন্ত আমার মোট আয় ৯৫,০০০ (পঁচানব্বই হাজার) ডলার এর বেশি। এখন প্রতি মাসে আমি ৭০০০ থেকে ৮০০০ ডলার ইনকাম করি। আমি যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা, অস্ট্রেলিয়া , যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশের কাজ করে থাকি।

এখন আমার একটি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কোম্পানি আছে। আমি নিজে কাজ করার পাশাপাশি খড়ঃ৯, খঊউচ, আমার ব্যাচ, আর নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কাজ করতে দিই এবং নতুনদের ফ্রিল্যান্সিং এর প্রশিক্ষণ দিই। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এই কাজগুলো আমি বিনামূল্যে করি।

আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো শিক্ষিত বেকার তরুণ তরুণীদের দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তোলা। আমি একজন দক্ষ উদ্যোক্তা হয়ে দেশের সেবায় কাজ করতে চাই সেজন্য সরকারের আইসিটি ডিভিশনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরীর প্রশিক্ষণ কামনা করছি । খঊউচ কোর্স করে এখন আমি স্বাবলম্বী। আমি আর্থিকভাবে সচ্ছল।

তিনি বলেন ইচ্ছে, চেষ্টা, ধৈর্য্য আর খঊউচ এর মত সঠিক দিক নির্দেশনা থাকলে যে কেউ ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে পারে। খঊউচ কোর্স করে অনেকে সফল হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চল দুর্গম হওয়ায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

আমার সর্বপ্রথম ইচ্ছা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এর শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের বিনামূল্যে আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ,পরামর্শ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে আত্মনির্ভরশীল করা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করা। সকলে আশীর্বাদ করবেন আমি যেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!