নারী এমপি’র গুঞ্জনে সরগরম পার্বত্য চট্টগ্রাম
নুরুল আলম:: সংরক্ষিত নারী আসনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী এমপি পদের গুঞ্জন এখন ছড়িয়েছে পার্বত্য জনপদ খাগড়াছড়িতে। সবুজে বেষ্টিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি মাত্র সংরক্ষিত আসন। এ আসনে খাগড়াছড়ি,রাঙামাটি ও বান্দরবানের দক্ষ নারীরা নেত্রীরাই নেতৃত্বের যোগ্যতার মাপকাটিতে স্থান পায় এ পদে।
তবে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে খাগড়াছড়ির থেকে এমপি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন,খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ক্রইসাঞো চৌধুরী,সাধারণ সম্পাদক শাহিনা আক্তার, সহ সভাপতি নিগার সুলতানা,সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংরক্ষিত আসনের নারী এমপি বাসন্তী চাকমা, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদিকা বাঁশরী মারমা, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা শতরুপা চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুইচিং থুই মারমা ও দীঘিনালা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম লাকীসহ ৮জন রয়েছে এমপি হওয়ার প্রত্যাশীর তালিকায় ।
খাগড়াছড়ির তালিকায় থাকা অনেক নেত্রীই এমপি প্রত্যাশী হয়ে নিজেদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও জনসমর্থনের বিন্দু মাত্র নেই অনেকের। দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নিজেদের আখের গোছানো,পদ ব্যবহার করে অল্প সময়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন, নীরবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে কিছু নেত্রীর। আবার অন্যের লাইসেন্সে ঠিকাদারী,স্বজনদের নামে সম্পদ করার মতও নারী নেত্রী রয়েছে এ তালিকায়। আবার দীর্ঘ সময় রাজনীতি করা নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকলেও অদৃশ্য কারনে কোণঠাসা করে রাখার মতো ঘটনা আছে পাহাড়ি এ জেলায়।
নারী এমপি মনোনয়ন সংগ্রহকারী শাহিনা আক্তার জানান,পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটন উন্নয়নসহ সম্ভাবনার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি। এখানের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন খাত,শিল্পখাত,নারী উদ্যোক্তার সৃষ্টি,শিক্ষার প্রসার,স্বাস্থ্যখাতে নারীদের সংযুক্ত করে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরকে সম্বিলিত প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে কাজ করতে চান তিনি। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দোয়া ও ভালোবাসা পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিতে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুনজর রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। তিনি যাকে যোগ্য বলে মনে করবেন তাকেই পাহাড়ের নেতৃত্বের দায়িত্বভার দেবেন বলে তিনি মন্তব্য করে সাধারন মানুষের পাশে থাকতে পদ নয় বড় মনের প্রয়োজন হয় বলেও তিনি জানান।
এছাড়াও শাহিনা আক্তার এর রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমার গল্প। স্নাতক শেষ করা এ নেত্রী রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের আর্দশের একনিষ্ঠ পথযাত্রী হওয়ায় হয়েছে হামলা-মামলার শিকার। এদিকে ২০১১-২০২৪ সালে তিনি খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। ২০২৭-২২ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। ২০০৯-১৪ মানিকছড়ি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রাঙ্গামাটি থেকে সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু,রাঙামাটি সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আক্তার,রাঙ্গামাটি মহিলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধার সম্পাদক রোকেয়া বেগম,মুহিতা দেওয়ানসহ ৮জন নাম শুনা যাচ্ছে। অসমর্থিত সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেলেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সুনিদিষ্ট তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রাঙামাটির ফিরোজা বেগম চিনু বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি-সম্প্রীতির নিভাস ভূমি। এখানে যাতে উন্নয়ন তরান্বিত হয়। সকল জাতি গোষ্ঠি যার যার কৃষ্টি,সংস্কৃতি নিয়ে যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে লক্ষ নিয়ে কাজ করবো। এছাড়াও পাহাড়ে নারীদের এগিয়ে নিতে নানামূখী উদ্যোগ নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এগিয়ে যাবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে বান্দরবানে নারী এমপি প্রার্থী প্রত্যাশীর তালিকাও রয়েছে অনেকে। সব কিছুর পরও জনগণের কাঙ্খিত প্রত্যাশা পুরনের স্থলে সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের কাছ থেকে আশার প্রতিফলন বা সেবার স্থলে খালি হাতে ফেরা পার্বত্যবাসীরা হতাশ। পাহাড়ে অসাম্প্রদায়িকতার বাণী মুখে শুনা গেলেও বরাদ্দ আসলেই জাতি বেদ,আর আত্মীয়করণ,স্বজনপ্রীতির ফলে জনগণ তাদের আশা-প্রত্যাশার উল্টোপিঠে থাকা অবহেলার চিত্র খুজে যায় বলে আক্ষেপ প্রকাশ করতে দেখা যায় পাহাড়ের নারী এমপি’র বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সূত্র অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলবে এই ফরম বিতরণ কার্যক্রম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন এক হাজার ৫৪৯ জন। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) বিকেলে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই তথ্য জানান।
গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া মনোনয়নপত্র বিক্রি শেষ হয় বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়। পরে সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এবারের সংসদে আওয়ামী লীগ ৪৮টি সংরক্ষিত আসন পাবে। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যও সংরক্ষিত আসনের এমপি বাছাইয়ের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদনেত্রী শেখ হাসিনার হাতে অর্পণ করেছে। ফলে জাতীয় পার্টির দুটি বাদে সব সংরক্ষিত আসনই আওয়ামী লীগের কোটায় থাকছে।
এদিকে জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, ভোট হবে আগামী ১৪ মার্চ। অবশ্য সংরক্ষিত নারী আসনে সাধারণত নিজেদের প্রাপ্য আসনগুলোয় একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয় দল বা জোটগুলো। ফলে এখানে ভোটের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল বা জোটগুলোর পাওয়া আসনের বিপরীতে সংখ্যানুপাতে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টন করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ২২৩টি আসনে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন ৬২টি আসনে। তারা সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দুটি দল দুটি আসন পেয়েছে। তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেছে। ফলে আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ৪৮টি আসন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। তারা দুটি সংরক্ষিত নারী আসন পাবে।