নুরুল আলম:: খাগড়াছড়িতে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজের অজুহাতে বিভিন্ন নদী-খাল ও ছড়া থেকে বেপরোয়াভাবে চলছে বালু উত্তোলন। জেলায় সরকারিভাবে বালু উত্তোলনের জন্য ৯টি মহালে বৈধ ইজারাদার নিয়োগ করা হলেও খাগড়াছড়ি সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানে দিনে-রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে।
প্রভাবশালী মহলের আগ্রাসনের শিকার হয়ে পুরো জেলার নদী-খাল-ছড়াগুলো এখন যেনো বালুখেকোদের নিষ্ঠুরতার বলি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৈধ বালুমহাল থেকেও ড্রেজার (গভীর থেকে বালু উত্তোলনের বিশেষ বৈদ্যুতিক যন্ত্র) দিয়ে বালু তোলার আইনি কোন সুযোগ নেই।
খোদ জেলাসদরেই প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন ও কেনা-বেচার হাট বসলেও দেখার কেউ-ই নেই। এভাবে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি ওজনের বালু ভর্তি ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে গ্রামীণ সড়কগুলোতেও অকালে ভাঙন ধরছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বৈধ বালুমহাল ইজারাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
একজন ইজারাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি জেলায় চলমান কিছু বড় অংকের নির্মাণ কাজের ঠিকাদারের সাথে মিলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যখন-তখন যেখান থেকে খুশী সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করছেন। প্রকাশ্যে ড্রেজার ব্যবহার করলেও সবাই যেনো জেনেও না জানার ভান ধরছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত বালু খেকোদের তাণ্ডবে জেলার সকল উপজেলাই ক্ষতিগ্রস্থ। বিভিন্ন খাল-ছড়া থেকে বৈধ-অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে খাল ও ছড়ার মানুষের বসতবাড়ি-জমি ভাঙনের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়িত। বালুবাহী বিভিন্ন ভারী যানবাহনের চাপে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের অল্প দিনের মাথাতেই চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা জেলা প্রশাসনকে রেজুলেশন আকারে অবহিত করা হলেও কোনই প্রতিকার মেলেনি।
মানিকছড়ির বেশকিছু এলাকায় রাস্তায় দেখা গেছে আরো ভয়াবহ চিত্র। এ সড়কের বিভিন্নস্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে শ্রমিকরা। কিন্তু নেপথ্য ব্যক্তির নাম বলতে রাজি নয় তারা। অতিরিক্ত বালু ভর্তি ট্রাকের ভারে এ গ্রামীণ সড়কটি এখন বিলীন হওয়ার পথে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত। আবার কোথাও সড়কের কোন অস্থিত্ব নেই।
খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী নদী, খাগড়াছড়ি খাল ও রাঙাপানিছড়া, দীঘিনালা উপজেলার মাইনী নদী, মানিকছড়ি ও পানছড়ি পাশ দিয়ে প্রবাহিত চেঙ্গীসহ বিভিন্ন ছড়া, মানিকছড়ি খাল, চেঙ্গুছড়া ও বড়বিল, গুইমারার বাইল্যাছড়ি, তৈর্কমা ও সিন্দুকছড়িসহ বিভিন্ন নদী ও খালগুলো থেকে অবৈধভাবে তুলা হচ্ছে বালু। বিশেষ করে জেলার মানিকছড়ি এবং খাগড়াছড়ি সদর থেকেই সবচেয়ে বালু উত্তোলন হবার অভিযোগ করেছে ‘খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন’।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। অভিযানের খবর আগে জেনে যাওয়ায় সফল হচ্ছে না। তবে ভ্রাম্যমান আদালতের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।