নুরুল আলম:: খাগড়াছড়িতে অনুমোদন ছাড়াই শতাধিক অবৈধ করাত কলের রমরমা ব্যবসা চলছে। এ কারণে সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি নিয়ম ও নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য করাতকল। করাত কলে জোত পারমিন ও রোলটি পারমিটের গাছ চিড়ানোর নিয়ম থাকলেও তা মানছে না করাত কলের মালিকরা। অবৈধ কাঠ চিড়ানো হচ্ছে রাতে দিনে অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ী চক্র। তারা কাঠ চিড়ে সমতল জেলায় রাতের আধারে ট্রাক বোঝাই করে পাচার করে। এছাড়াও রয়েছে অভিনয়ব কায়দায় পাচারের অভিযোগ।
স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাব ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরধারি না থাকায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব স’মিল বা করাত কল। এসব স’মিলের কারণে উজাড় হচ্ছে বনজ ও ফলদসহ নানান প্রজাতির গাছ; যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।
তবে স’মিল মালিকরা বলছেন, উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তার অফিস প্রায়ই বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা বন বিভাগের তথ্যমতে, খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় প্রায় শতাধিক করাত কল রয়েছে। কয়েকটি করাত কলের লাইসেন্স থাকলেও নবায়ন হয় না দীর্ঘদিন ধরে। গত এক বছরের অধিক সময় ধরে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। বর্তমানে জেলায় কয়েকটি স’মিল রয়েছে তা সঠিক তথ্য জানেন না বন বিভাগ।
খাগড়াছড়ি জেলা বন বিভাগ আরও বলছেন, অনুমোদনহীন এসব মিলে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত তদারকি না করায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। করাত-কলের মালিক ও অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা নীরবেই এসব কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে-সেখানে স’মিল স্থাপনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। কমছে অক্সিজেনের ভারসাম্য।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন আইন ১৯২৭ ও তৎপ্রণীত স’মিল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী কোনো স’মিল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স নেওয়ার পর থেকে প্রতিবছর তা নবায়ন করতে হবে। স’মিল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স পাওয়ার পর নিতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, এ ছাড়া যেখানে-সেখানে স’মিল স্থাপন করা যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক করাত-কল মালিক বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের স’মিল চলছে। অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি এখনও অনুমোদন পাইনি।
স্থানীয়রা বলেন, যারা অবৈধভাবে এসব স’মিল চালাচ্ছেন। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে এই কর্মকাণ্ড করে থাকেন।
গুইমারা উপজেলা বন কর্মকর্তা মহসিন তালুকদার বলেন, এ উপজেলায় মোট ১৩টি করাত কল আছে। এর মধ্যে ১০টির লাইসেন্স নবায়ন থাকলেও অবশিষ্ট ৩টির নবায়ন নেই।
এই প্রতিনিধির আরেক প্রশ্নের জবাবে অবৈব ভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ মজুত করে চিড়াই করে সমতলে পাচার করে থাকে বলে যে অভিযোগ রয়েছে এই ব্যবপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিট্রোট পরিদর্শন করে জরিমানা করেছেন এই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে আবারো অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, এটা সম্পূর্ণ বন বিভাগের কার্যক্রম। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারি। বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা প্রস্তুত।