নুরুল আলম:: শীতের মাঝামাঝি সরিষার হলুদ ফুলে অপরূপ সাজে সেজেছে পাহাড় কন্যা খাগড়াছড়ি। দেশের সমতলাঞ্চল হতে পাহাড়ের আবহাওয়ার পার্থক্য থাকলেও হলুদ বরণ সরিষা ফুলের কোন পার্থক্য নেই। যেন চোখ ধাঁধানো হলুদ সাম্রাজ্য। আঁকা-বাঁকা আর উঁচু-নিচু দুই পাহাড়ের পাদদেশে আবাদ করা সরিষা ফুলের নজরকাড়া অপরূপ দৃশ্য দেখে যে কেউ নিজের অজান্তে হলুদের প্রকৃতিতে হারিয়ে যাবে।
ঋতু বৈচিত্রের চক্রে সবুজের বুক চিরে হলুদের সমারোহ যেন প্রকৃতির স্বর্গীয় আরেক রূপ। পাহাড়ের কোল জুড়ে সরিষা ক্ষেত উত্তরের মৃদু শীতল সমীরনে ঢেউ খেলানো দৃশ্য যেন কাউকে স্বাগত জানাতে হলুদ ফুলের ঢালা নিয়ে অপেক্ষমান ।
ফুলের উপর বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি, ভ্রমর, ফড়িংসহ নানা কীট-পতঙ্গ মধু সংগ্রহে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত এক ফুল থেকে আরেক ফুলে উড়ে বেড়ানোর খেলায় মাতোয়ারা। শীতের পড়ন্ত বিকালে পশ্চিম আকাশে হেলেপড়া দিবাকরের সোনালি কিরণে হলুদ ফুলে যখন উত্তরের হাওয়া লাগে, তখন ফুলগুলো মাতাল করা দোল দিয়ে হলুদ তরঙ্গের জোয়ারে প্লাবিত করে প্রকৃতি প্রেমীদের হৃদয়। আকৃষ্ট করে নেয় দৃশ্য ও মুগ্ধতায়। শিশির ভেজা হাড় কাপানো শীতের সকালে হলুদ ফুলের ডগায় ডগায় এবং পাপড়ি জুড়ে মুক্তোর মত ছোট ছোট শিশির বিন্দুগুলো আরো আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে কাছে টানে প্রকৃতি প্রেমীদের।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের কোল ঘেঁসে মাঠে মাঠে হলুদ আভা ছড়িয়েছে সরিষা ক্ষেতগুলো। শীতের রিক্ততায় সরষে ফুলের হলুদ রঙ যেন প্রাণের স্পন্দন নিয়ে আসে। সরষে ক্ষেত পাহাড়ের রুপকে আরও বেশী অপরুপ করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে পল্লা দিয়ে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তৈল বীজ জাতীয় শস্য সরিষার আবাদ দিন দিন পাহাড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল, কৃষি বিভাগের প্রণোদনা, বীজ ও প্রদর্শনীসহ সার্বিক সহযোগিতা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পতিত জমিতে চাষাবাদের ফলে অল্প সময় ও খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন পাহাড়ে সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছে প্রান্তিক চাষিরা। এতে স্থানীয় তেলের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে রপ্তানি করে পাহাড়ের প্রান্তিক চাষিরা আর্থিক লাভবান হচ্ছে।
পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি এলাকার কৃষক রোমান চাকমা বলেন, পানছড়ি কৃষি অফিসের নিদের্শনা ও সহযোগিতায় পতিত জমিতে সরিষা চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে তিনি খুব খুশি। সবাই যদি একটু একটু সরিষা চাষ করে তাহলে আমাদের তেলের সংকট থাকবে না বলে জানান তিনি ।
দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী এলাকার সরিষা চাষি লনডন চাকমা বলেন, সরিষা চাষ লাভজনক ফসল। গত বছর কৃষি অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক সরিষা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। এবছরও কৃষি অফিস হতে বীজ ও সার পেয়ে সরিষা চাষ করেছি। তবে এ বছর অসময় বৃষ্টির কারণে কিছু নষ্ট হয়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় ফলন কম হতে পারে।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার সরিষা চাষি আব্দুল মোতালেব বলেন, উপসহকারী কৃষি দেবাশীষ চাকমার অনুপ্রেরণা ও সার্বিক সহযোগিতায় ধান ও সবজির পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষ করি। কৃষি অফিস থেকে বীজসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদানে সরিষা চাষে ভালোই লাভ হচ্ছে।
তার মতে এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভাল হলে বিঘা প্রতি চার থেকে পাঁচ মণ সরিষা উৎপাদন সম্ভব। আর প্রতি মণ সরিষার মূল্য দুই হাজার আটশত থেকে তিন হাজার টাকা। মূলত সরিষা একটি তৈল বীজ জাতীয় অর্থকারী ফসল।
খাগড়াছড়ি উপসহকারী কৃষি আব্দুল হাই বলেন, খাগড়াছড়ির মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকুূলে রয়েছে। তাই এ জেলায় সরিষা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছরে জেলায় ৫০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। আগামীতে এ জেলায় আরো বেশি সরিষা চাষ হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।