নুরুল আলম :: পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন রকমারি ফল উদ্ভব হলেও কিছু ফলের মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয়তা। সে ফল সারা বছর পাওয়া না গেলেও বছরে শেষের দিকে একবার বাজারে আসে বিক্রির জন্য।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে তরতাজা সবজি হতে শুরু করে যেন নানান রকমারি নতুন ফল জন্মে পাহাড়ের পাদদেশে। সেসব ফলের মধ্যে রয়েছে ‘ঠান্ডা আলু’। স্বাদে মিষ্টি হওয়াই বান্দরবানের দিনদিন কদর বাড়ছে এই ফলটি।
ফলটি নাম ঠান্ডা আলু। মিষ্টি স্বাদের যা দেখতে গায়ের সাদা বাদামি বর্ণের লম্বা ও গোলাকৃতি। এই ফলটি চামড়া পাতলা খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা ভাবে আবার রান্না করেও খাওয়া যায়। মারমাদের ভাষায় এই ফলটি নাম “রোয়াই উ”। আর বাংলা ভাষার “ঠান্ডা আলু” নামে পরিচিত। যেটি ইংরেজিতে ম্যাক্সিকান ইয়াম বা ম্যাক্সিকান টার্নিপ বলা হয়।
‘ঠান্ডা আলু’ এই মিষ্টি ফলটি একমাত্র পাহাড়ে পাদদেশে জুমের চাষাবাদে এই আলু চাষ করে থাকে। জুমের নতুন ধানের বীজ রোপন করার সময় জুমের বীজ সাথে ঠান্ডা আলু বীজ বপন করা হয়। ধান উঠে গেলে আলুর গাছগুলো বাড়তে থাকে। নিয়ম অনুসারে এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত চাষের প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস পর্যন্ত সাধারণ ঠান্ডা আলুর মৌসুম। মূলত এই ফলের চাষ তিন পার্বত্য জেলায় জুমে চাষ হয় । আবার কিছু কিছু জায়গায় জমিতে চাষ করা হয়। ফলের ভিতরে রয়েছে ভিটামিন সি ও প্রচুর আয়োডিন। এই ফলটি শীতকালে বছর শেষের দিকে বাজারে আসে। ফলে শুরুতে বাজার দাম থাকে বেশ দ্বিগুণ।
রাঙ্গামাটির বরকল, নানিয়ারচর, বাঘাইরহাট, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, ডুলুপাড়া, চড়ুই পাড়া, বাঘমারা ও খাগড়াছড়ির গুইমারা, লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি মাটিরাঙ্গা মানিকছড়ি সহ বিভিন্ন গ্রামে জুমের ধান কাটার কয়েকমাস পরই শুরু হয় ঠান্ডা আলু ফল উত্তোলন। এতে করে হাসিখুশি মনে জুমের বাগান হতে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছে জুমিয়ারা। আবার কিছু জুমের বাগানে ফলন মোটা তাজাকরণ হওয়ার কারণে চার হতে ৫ আটি বেধে প্রেরণ করছে বাজারে। সেই ফল বাজারে আসতে শুরু করলে খুচরা বিক্রেতারা জড়ো হচ্ছে ফলটি কিনতে। নির্দিষ্ট দামে ফলটি কিনে শুরু হয়ে যায় বস্তার মধ্যে প্যাকিং জাতকরন। ঠান্ডা আলু ফলগুলোকে খুচরা বিক্রেতারা কিনে কক্সবাজার সাতকানিয়া চট্টগ্রাম সহ রাজধানীতে ও বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে গাড়ি করে বহন করে। তবে তিন পার্বত্য জেলায় রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী পাশাপাশি বাঙালিদের কাছে ও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
জানা যায়, জুমের নতুন ধানের বীজ রোপণ করার সময় জুমের বীজ সাথে ঠান্ডা আলু বীজ রোপনে শুরু হয়। এপ্রিল মাস হতে প্রক্রিয়াভাবে শুরু হয় বীজ রোপণের কাজ। মাটি উর্বরতা ঠিক থাকলে বীজ গুলো হতে চারা বের হতে শক্তি জোগান পায়। আবার হালকা ভিজে মাটি হলে ফলটি বড় আকারে ধারণ করে। বীজ রোপনে সময় কোন রাসায়নিক ব্যবহার না করে ফলটি মাটি জোগান পেয়ে উঠে যায়। আবার এই বীজ গুলো পাথরে থাকলে ফলগুলো লম্বা হয়। ভিজে মাটি উপর বীজ রোপণ করলে মোটা ও গোল আকারে ধারণ করে মিষ্টি স্বাদে হয়।
বাজারের বিক্রি করতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, আমরা জুম চাষ শুরুতে বীজগুলো রোপণ করি। কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়া ফলগুলো উৎপাদন হয়। জু ম থেকে তুলে বিক্রি করতে এসেছি দাম শুরুতেই বেশী হলেও সবাই এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
অন্য এক খুচরা বিক্রেতা জানান, ঠান্ডা আলু ফলগুলো বাজারে আসলে আমরা ১০ হতে ১২ কিনে নিয়ে যায়। এই ফল গুলো কিনে আমরা কক্সবাজার কেরানীহাট চট্টগ্রাম সহ রাজধানীতে বিক্রি করি। বান্দরবান জেলা ছাড়া রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। পরিবহণ খরচ বাদে আমাদের লাভ হয়।
খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, পার্বত্য অঞ্চলে ঠান্ডা আলু অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। এটি সাধারণত মাটির নিচেই হয়ে থাকে। কোনো প্রকার রাসায়নিক সার কিংবাদ কিটনাশক ছাড়াই এটির ফলন হয় বিদায় এটিতে অনেক আয়োডিন ও ভিটামিন সি থাকে। বর্তমানে ধান ও গম চাষের ফাকে ফাকে এই আলু চাষে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ- পরিচালক এসএম শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন, পাহাড়ে জুমিয়াদের জুম চাষের সময় ধান ও বিভিন্ন রকমারি ফলজ পাশাপাশি ঠান্ডা আলুর বীজ বপন করে থাকেন। তবে মাঝারি ঢালু পাহাড়ি জমিতে ঠান্ডা আলুর ফলন ভালো হয়। জুমের মাটিতে ঠান্ডা আলুর চাষের জন্য কৃষি বিভাগ হতেই সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।