শিরোনাম
সোম. ডিসে ২৩, ২০২৪

নুরুল আলম: পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির জেলার ৩ জেলা প্রসাশকগণকে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে এইচআরপিবি এর পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট মনজিল মোরসেদ কর্তৃক লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। নোটিশ ও সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করেই চলছে ইটভাটার সকল কার্যক্রম।

সম্প্রতি ৮ নভেম্বর ২০২৩ ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধে উকিল নোটিশ প্রেরণ করা হলেও নিয়ম অমান্য করে খাগড়াছড়ি জেলা অধিকাংশ ইটভাটায় ইট তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে। তবে নামে মাত্র কিছু ইটভাটায় জরিমানা করলেও জরিমানাকৃত ইটভাটা গুলোতে এখনো বহালতবিয়তে ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ অব্যহত রেখেছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, বান্দরবান জেলা মোট ইটভাটা রয়েছে প্রায় ৪৬টি। এর মধ্যে নামা পাইতং উপজেলায় ২৭টি, আলিকদমে ৩টি, নাইখ্যাংছড়িতে ৪টি, বান্দরবান সদরে ৯টি, রুমায় ২টি ও থানচিতে ১টি। সরকারি ভাবে ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধের আইনি নোটিশ থাকা সত্বেও তা অমান্য করে ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ অব্যহত রেখেছেন ভাটার মালিকরা। বনের কাঠ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে প্রতিনিয়িত ইটপোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এসব দেখেও যেন না দেখার ভান করছে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, এইচআরপিবি পার্বত্য অঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য জনস্বার্থে হাইকোর্ট রীট পিটিশন নং ১২০৪/২০২২ দায়ের করলে শুনানী অন্তে হাইকোট রুল জারী করে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। ইটভাটার মালিকরা উক্ত আদেশ মোডিফিকেশন চাইলে হাইকোর্ট আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করলে চেম্বার জজ বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম জেলা প্রশাসক বান্দরবানকে যদি কোন অবৈধ ইটভাটার মালিক অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।

সে প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় এইচআরপিবি-এর প্রেসিডেন্ট সিনিয়র এডভোকেট মনজিল মোরশেদ আপীল বিভাগে বান্দরবান জেলা প্রশাসকসহ মোট ২০জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার পিটিশন আপীল বিভাগে দায়ের করেন। যাদের বিরুদ্ধে অবমাননার পিটিশন দায়ের কারা হয়েছে তারা হলেন- বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, ইটভাটা মালিক মোহাম্মম ইসলাম, মোঃ নাসিরু আলম, বিপ্লব কান্তি দাস, হারুনুর রশিদ চৌধুরী, আব্দুল কাদের সওদাগর, মোঃ নাজমুল হক, মোঃ শামসুদ্দিন, থোয়াইংনুং চৌধুরী, আল গাজী আব্দুল মান্নান, মোঃ আজিজুল হক, মোঃ মাকসুদুল আলম, জহির আহমেদ, লক্ষীপদ দাস, বখতিয়ার আহমেদ, ফজল করিম এলাইস, হাজী ফজল সওদাগর, মোঃ নাজমুল হক চৌধুরী, হায়দার আলী, মাহবুবুর রহমান, মোঃ শফিকুল আলম।

রাঙ্গামাটি জেলার ২৫টি ইটভাটা জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করেই চলছে ইটভাটার কার্যক্রম। এসব ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে বনের কাঠ পোড়ানোর কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। এছাড়াও ফসলী জমি থেকে মাটি উত্তোলন করে সেই মাটি দিয়ে তৈরি করছে ইট। অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে আইনী নোটিশ থাকা সত্বেও মানছেনা ভাটার মালিকরা। যার ফলে স্থানীয় জন জীবন হুমকির মূখে পরছে প্রতিনিয়ত। জানা যায়, রাজস্থলিতে ১টি, কাউখালীতে ১৫টি, বাঘাইছড়িতে ২টি, লংগদুতে ২টিসহ প্রায় ২৫টি ইটভাটা রয়েছে রাঙ্গামাটিতে। এরই মধ্যে সম্প্রতি ২টি ইটভাটায় জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। এর পরও থামছেনা অবৈধ এসব ইটভাটার কার্যক্রম।

সচেতন মহলের দাবি, যেকোনো ব্রিকফিল্ডে জ্বালানি কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ থাকলেও পরিবেশ আইন লঙ্গন করে ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। তাতে দুষিত হচ্ছে এবং পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসক জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে দায় সারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক জানান, ‘ইটভাটা মালিকেরা যদি প্রশাসনের নির্দেশনা না মানেন, তাহলে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে ইটভাটা মালিকদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ‘গত বছর বেআইনিভাবে ইটভাটা চালানোয় বিভিন্ন ভাটায় জরিমানা করা হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করলে এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান এর সাথে ইটভাটার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথায় কোথায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে তার সু-নিদ্রিষ্ট তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বান্দরবানের ইটভাটাগুলোর উপর মামলা চলমান আছে। এগুলোর মধ্যে বেশকিছু ভাটার বিরুদ্ধে বন্ধের আদেশ আছে। আমরা আইন মেনে তদন্ত স্বাপেক্ষে জেলা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবো।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!