শিরোনাম
মঙ্গল. ডিসে ২৪, ২০২৪

গাঁজা চাষে সাধারণ পাহাড়িদের প্রলুদ্ধ করছে সশস্ত্র আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন

চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে অপহরণ-গুম-খুনের স্বীকার সাধারণ মানুষের

নিজস্ব প্রতিবেদক:: গাঁজা চাষে সাধারণ পাহাড়িদের প্রলুদ্ধ করছে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন। এই সংগঠন চাঁদাবাজির পাশাপাশি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে চাষ হচ্ছে নিষিদ্ধ গাঁজা। মূলত লোকচুক্ষুর অন্তরাল করতেই গাঁজা চাষের জন্য দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ে লোকচুক্ষুর অন্তরালে রীতিমত গাঁজার সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। মহলটি এ ক্ষেত্রে সাধারণ পাহাড়িদের প্রলুদ্ধ করছে। আর মাদক বিক্রির অর্থে কেনা হচ্ছে মরণাস্ত্র।

এসব সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে চাঁদা দিতে ব্যার্থ হলে, অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পরও যদি চাঁদা না দেয় তাহলে হত্যার মত জঘন্ন কর্মকান্ড করে থাকে।

ইতমধ্যেই খাগড়াছড়ি রাসেল নামক এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন। তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ঘোষনা দিয়েছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে হরতাল প্রত্যাহার করে এবং অপহরিত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার কার্যক্রম অব্যহত আছে বলে জানান প্রশাসন।

চলতি মাসের ৯ নভেম্বর ২০২৩ আট মাইল এলাকা থেকে সে নিখোঁজ হয়। বাগান দেখানোর কথা বলে তাকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে পরিবার সূত্র জানায়। মুলত বাগান দেখার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন গাছ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম রাসেল।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত কলাবুনিয়া এলাকায় নিরাপত্তার বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৭ বিঘা জমির গাঁজার ক্ষেত ধ্বংস করে দিয়েছে। যার বাজার মুল্য আনুমানিক প্রায় ৪ কোটি টাকা। এ ঘটনায় গাঁজা চাষের সাথে জড়িত আটক দুই সহোদরকে আলামতসহ পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

প্রত্যন্ত ঐ এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অবস্থানের খবর পেয়ে তল্লাসীকালে বিশাল এ গাঁজার ক্ষেতটির সন্ধান পায় নিরাপত্তাবাহিনী। পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপ তাদের সংগঠনের অর্থের যোগান দিতে দুই পাহাড়ের মাঝে উর্বর জমিতে ঘেরা দিয়ে সুকৌশলে এবং বিশেষ নিরাপত্তায় এ গাঁজার চাষ করা হচ্ছিল। পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে গাঁজার গাছগুলো উপড়িয়ে স্তুপ করে আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করা হয়।

এদিকে ৭ বিঘা গাঁজার ক্ষেত ধ্বংসের ১০ দিন না যেতেই খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার কালা পাহাড় পেরিয়ে দুর্গম দুইল্যতলী গ্রামে মিললো গাঁজার অভয়ারণ্য। এক বিঘা বা দুই বিঘা নয়, ২শত বিঘা পাহাড়ি জমিতে গাঁজার চাষ করা হয়েছে। দুর্গম এলাকা হলেও নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানের ফলে সন্ধান মেলে এসব গাঁজা ক্ষেতের।

মহালছড়ি জোনের আওতাধীন দুইল্যাছড়া পাড়ায় প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের ২শত বিঘা জমির গাঁজা ক্ষেত শনাক্ত করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় গাঁজা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে আটক করা যায়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে অবৈধ গাঁজা চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে গাঁজার চাষ করা হয়। গাঁজা চাষের জন্য দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে বেছে নেয়া হয়েছে।

এদিকে নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছে গাঁজা চাষী। ধারনা করা হচ্ছে ওই এলাকার আশেপাশে আরো গাঁজা চাষ হয়ে থাকতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ সূত্রে জানায়,পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতাকে ব্যবহার করে আঞ্চলিক কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তিগুলো পাহাড়ের জমির উপর তাদের আদিপত্য নিরস্কুশ করার পায়তারা করছে। তারা এ জমির দখলদারিত্ব বজায় রেখে সেখানে পপি ও গাঁজার মত মাদক চাষ করতে চায়।

এ মাদক উৎপাদন করে তারা স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করে মানুষকে নেশাসক্ত করতে চায়। কেননা নেশাগ্রস্ত মানুষের মগজ ধোলাই করে তাকে অপরাধী কর্মকান্ডে সহজে সম্পৃত্ত করা যায়।

তিনি বলেন, স্থানীয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠগুলো উৎপাদিত মাদক বিক্রি করা অর্থ ব্যায় হয় তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা, অস্ত্র ক্রয় ও তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মে। এ সব অস্ত্র ও লোকবল সরকার ও দেশের অখন্ডতা বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযানের কারনে পাহাড়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

মাদক বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এসব মাদক ব্যবসায়ী ও দুষ্কৃতিকারীদের আটক করার অভিযান অব্যাহত রাখার দাবী জানিয়েছে সচেতন মহল।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!