“জটিল সমীকরণে হিসাব-নিকাশে চলছে পাহাড়ে”
।। আল-মামুন, খাগড়াছড়ি।।
হিসাব-নিকাশের জটিল সমীকরণ চলছে পাহাড়ে। প্রার্থীর ছড়াছড়ি আওয়ামী লীগে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড়াতে পারে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ। অন্যদিকে জন বিস্ফোরণের আশা নিয়ে নির্বাচনে হাই কামান্ডের সিধান্তের সময়ের অপেক্ষা করছে বিএনপি। বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ে ঘেঁরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমী পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির ভোটের মাঠের রাজনৈতিক চিত্রটি পাহাড়ের সমতলের তুলনায় ভিন্ন ধারার। এখানে রাজনীতির আর নির্বাচনী সমীকরণটা বেশ জটিল।
এবারের নির্বাচনের আগেই হেভিওয়েট’দের ছড়াছড়িতে একাট্টা কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার দূর্গে অনেকটা বিদ্রোহ-কোন্দলের হাতছানি দিচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগে। এতে প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে নীবরে মাঠে চুপ থাকা জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব। এরই মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে সরব হয়ে উঠেছে বঞ্চিতরা। ফলে নিজ দহে পুড়ছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ।
দীর্ঘ সময় সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও নিরাশার কোন্দল আরো চরম বিস্ফোরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে জয়ের পথে নানা শঙ্কা ও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ইউপিডিএফ এর মাঠ খেলার বাস্তবতাকে আরো সহজ করে তুলবে বলে মনে করছে পাহাড়বাসী। অন্যদিকে নীরবে সরব হয়ে জয়ের মাঠ চষে বেড়াচ্ছে ইউপিডিএফ। বিএনপি নির্বাচনকালীন নানা সিধান্ত আর দলের হাই কমান্ডের গ্রীণ সিগনালের অপেক্ষায় থাকা খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি অনেকটা জন বিস্ফোরণের জন্য দিন গুনছে।
খাগড়াছড়িতে নানা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। ৯টি উপজেলা,তিন পৌরসভা নিয়ে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। পাহাড়ে শিক্ষা,স্বাস্থ্য,কৃষি,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন,সামাজিক নিরাপত্তাসহ অবকাঠামো নির্মাণে সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড,পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ,এলজিইডি,গণপূর্ত,পৌরসভা,উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতান্ত জনপদেও। ফলে ওয়ার্ড,ইউনিয়ন,উপজেলা,রূপান্তরিত হচ্ছে একেকটি শহরে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এর চলতি বছর ২০২৩ সালের নভেম্বরে ‘দ্বাদশ’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ি ২৯৮নং আসনের রাজনীতির মাঠে চাঁঙ্গা হয়ে উঠেছে।
এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী মাঠে শুরু হয়ে গেছে নানা হিসেব-নিকাশ। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে জল্পনা কল্পনা,জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠতে শুরু করেছে মনোনয়ন প্রত্যাশারী। পাওয়া-না পাওয়া নিয়েও রয়েছে দলের মধ্যে অভিমান অভিযোগ। তারপরও মনোনয়ন ভাবনায় হিসেবের ভুলে কার মুখে হাঁসি আর পুঁড়ছে কার কপাল তা দেখা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এরই মধ্যে ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করলেও পাহাড়িয়া এ জনপদে বর্তমান দৃশ্যমান নানা উন্নয়ন এবং এখানকার মানুষের ভ্রাতৃত্বের যে মেলবন্ধন তা অক্ষুণ রাখতে শেষ পর্যন্ত কে হবে খাগড়াছড়ি ২৯৮ নং সংসদীয় আসনটির এমপি তাই এখন দেখার পালা।
তবে,সমতলের ভোটের লড়াই এর সাথে পার্বত্য জেলার রাজনীতির পার্থক্যটা ভিন্ন ধারায় হলেও খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি বড় দু’দলের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়ায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। দ্বাদশ এই নির্বাচনে একাধিক নাম সাধারন মানুষের মূখে মূখে শুনা গেলেও জল্পনা-কল্পনার চিত্রাঙ্কনে ফুরফুরে সতেঁজ মনের ভাবনায় ছাঁই দিয়ে পাল্টে যেতে পারে শেষ সময়ের মনোনয়ন প্রাপ্তির চিত্রটা। তাই এবারের ভোট হতে যাচ্ছে সুনিপুণ হিসেব-নিকাশে।
এবারের দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দৌড়ে-খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ২৯৮ নং আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা,জেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্বা রণ বিক্রম ত্রিপুরা,পানছড়ি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা,সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী,জেলা আ.লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুপ্রু চৌধুরী অপু,সাবেক এমপি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা,পুলিশের সাবেক আইজিপি নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, উদিয়মান তরুণ নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপ-কমিটি সদস্য ভবেশ^র রোয়াজা নিকি নৌকার মনোনয়ন চাইবে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খাগড়ছড়ির সাবেক মেয়র রফিকুল আলমের নাম শুনা যাচ্ছে ভোটারদের মুখে মুখে।
খাগড়াছড়িতে মাঠে সরব বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বিপরীতে বিএনপি,জাতীয় পার্টি ও ভিন্ন মেরুর শক্ত অবস্থানের নীরবে থাকা ইউপিডিএফের কে পাচ্ছে মনোনয়ন সে দৌড়ঝাঁপে নীরবে সিধান্ত নিচ্ছে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। আওয়ামীলীগের চির প্রতিপক্ষ বিএনপির নির্বাচনে গেলে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূঁইয়া মামলার সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও ওয়াদুদ ভূঁইয়ার সহধর্মীনি জাকিয়া জিনাত বিথীর বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবে বলে নাম শুনা যাচ্ছে।
ফলে পাহাড়ের ভোটের হিসাব-নিকাশটা বরাবরই আলাদা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দল গুলো নির্বাচনে আসলেও যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসলে খাগড়াছড়িতে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে আঞ্চলিক সংগঠন প্রসীত বিকাশ খীসা নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এতে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রসীত বিকাশ খীসা কিনবা সহ-সভাপতি নতুন কুমার চাকমার নাম শুনা যাচ্ছে দ্বাদশ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার। এছাড়াও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও এমএন লারমা সমর্থিত জেএসএস সংস্কারের পক্ষ থেকে কেউ প্রার্থী দিচ্ছে কিনা তা এখনো স্পর্ট হয়ে উঠেনি।
পাহাড়ের বিভিন্ন পরিসংখ্যান আর আঞ্চলিক দলের শক্ত অবস্থানে প্রত্যান্ত অঞ্চলে বসবাসরতদের একনিষ্ঠ সমর্থনে বেশ জোরালো ইউডিএফের ভোটের মাঠ। তাই প্রার্থী বিজয়ী করতে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে সাংগঠনিক ভাবে। বিগত নির্বাচনে প্রার্থী জয়ের আর এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোর নিচ্ছে সেদিকে তাকিয়ে আছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
খাগড়াছড়ি আসনটিতে পাহাড়ি ভোটার বেশি হওয়ায় প্রত্যেক নির্বাচনে ইউপিডিএফ বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। পাহাড়ের যেসব দুর্গম এলাকায় ভোটারের সংখ্যা বেশি সেসব স্থানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রভাব কম। যার ফলে দুর্গম পাহাড়ি-অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে গড়ে ভোটের ব্যবধান বেড়ে যায় তাদের। বিগত নির্বাচনগুলোতেও তারা বিপুল ভোট পেয়েছে। আগামী নির্বাচনেও ইউপিডিএফই যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাতে কোনো দ্বিধা নেই। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আঞ্চলিক এ দলটির প্রার্থীকে জয়ের সম্ভাব্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়াটা বেশ কঠিন।
এছাড়াও ভোটের মাঠের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেডিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ’র জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন,ইউপিডিএফ রাজনৈতিক দল হিসেবে (স্থানীয় ও জাতীয়) প্রতিটি নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল এমনকি নারী কর্মীদেরও ধরপাকড় করে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের চাপে কোনো কর্মসূচিই পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু দলের নিবন্ধন নেই সে ক্ষেত্রে আমরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে দল থেকে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশ স্বাধীনের পর বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী জিতেছে ৫ বার আর বিএনপি জিতেছে মাত্র ১ বার। সেই হিসেবে এ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী জয়ের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে থাকলেও বিএনপি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আওয়ামী লীগের জন্য বাড়তি চাপ হতে পারে নির্বাচনী ভোটের ফলাফলে। কারণ আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী শহর কেন্দ্রিক আর ভৌগোলিক ও রাজনৈতিকভাবে পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোরই প্রভাব বেশি।
বর্তমানে ২৯৮ নং খাগড়াছড়ি আসনটির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার যোগ্য নেতৃত্বে খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগের দূর্গে তিনিই রাজা। তাঁই তার ওপরই আস্থা রাখতে চান জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন উপজেলা নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও দুঃসময়ে শক্তহাতে দলের হালধরা এবং বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করে আসা কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার হাতে নিরাপদ খাগড়াছড়ির আওয়ামীলীগ। তাই দলের মনোনয়ন তাকেই দিয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে আবারও এ আসনটি উপহার দেয়ার সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জোর দাবী করেছে আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতারা।
এর আগে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপি ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে রাজনৈকিত বিভিন্ন দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারনে, এবারও দলের মনোনয়ন পেলে টানা তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার। তার একক আধিপত্যে একাট্টা খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ।
অন্যদিকে-সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা দলের সাধারণ কর্মী হিসেবে প্রত্যেকেরই দলের মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার থাকে জানিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী যাকেই নমিনেশন দিবে সেই হবে ২৯৮নং এ আসনের নৌকার মাঝি। এবার তিনি নৌকার মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে দলের হাই কমান্ড ও সভানেত্রী প্রিয় আপা জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই দেবে তার পক্ষে কাজ করবেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
গত সংসদ নির্বাচনের মতো এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকার মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে জেলা আ.লীগে সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, আমি এবারও দলের মনোনয়ন চাইবো। দলের প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যোগ্য মনে করে আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করবো। না দিলে দলীয় নিধান্ত মেনে নিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে যাবেন বলে তিনি জানান।
মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে খাপাজেপ চেয়ারম্যান মংসুপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, আমার এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা আমার অভিভাবক। তবে বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কোনো বিকল্প কেউ নেই। তার সঠিক দিক নির্দেশনায় পুরো জেলায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ এবং তা সঠিক সময় বাস্তবায়ন হওয়ায় এখন প্রতিটি উপজেলায় দৃশ্যমান উন্নয়নের মাধ্যমে দুর্গম-প্রত্যন্ত গ্রামও শহরে পরিণত হয়েছে। তাই দলের সিধান্তের বাহিরে আমি নই।
ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) বর্তমান সংসদ সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, জনবান্ধব বলেন আর দলবান্ধবই বলেন, আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করার চেষ্টা করেছি। সংগঠন ও এলাকার জনগণ যে লক্ষ্য নিয়ে আমাকে দু দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে। এলাকার সার্ভিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ^ নন্দীত জনগনের মানষ কন্যা প্রিয় জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনীত করবেন তার পক্ষেই আমি অতীতের মতো সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপ-কমিটি সদস্য ভবেশ^র রোয়াজা নিকি বলেন, নৌকার মনোনয়ন চাওয়াটা অমুলক কিছু নয়। এবার আমি মনোনয়ন চাইবো। দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন নৌকার জয়ের জন্য সকলকে সাথে নিয়ে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করবেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, চার দলীয় জোট সরকারের শাসনকালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সংগঠক হিসেবে রাজপথে সামনে সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। ওয়ান ইলেভেনে রাজপথে সক্রিয় ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখি। আগামী নির্বাচন খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি নির্বাচন। দেশের স্বার্থে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। খাগড়াছড়ি আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে বিতর্কমুক্ত প্রার্থী দরকার। তাই উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট খাগড়াছড়ি গড়তে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
এদিকে, ২০০১ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন,বর্তমান জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভুঁইয়া। এখন জেলা বিএনপিতে দৃশ্যত কোনো বিরোধ নেই। তাঁর নেতৃত্বেই জেলা বিএনপি একাট্টা। ফলে বিএনপির শক্ত অবস্থানে থাকার বিএনপির খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়া, যেহেতু এ সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাচ্ছেনা বলে একাধিক বক্তব্যে শুনা যায়। তাই কে প্রার্থী হচ্ছে তা দেখা এখনো সময়ের ব্যাপার।
সাংগঠকিভাবে তেমন কোনো অবস্থানে না থেকেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। জাপার কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, এর আগেও দুইবার প্রার্থী হয়েছিলাম ভাগ্যক্রমে সফল হতে পারিনি। যদি রাতে ভোট হয় তাহলেতো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তবে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আর রাতে ভোট হতে দিবে না। উনি দেশকে স্মার্ট-ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
বাংলাদেশ এখন বিশে^র দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি পাহাড়ে দৃশ্যমান উন্নয়নের মাধ্যমে দুর্গম প্রত্যন্ত গ্রামকেও শহরে পরিণত করেছে। এবার যদি আমরা মহাজোটে যায়, আমাকে যদি এ আসনটি দেয়া হয় আমি নির্বাচন করবো। আমি পাহাড়ি-বাঙ্গালি সকল জাতিগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশের মানুষের জন্য নিস্বার্থভাবে কাজ করছি বলেই আমাকে মাদর তেরেসা পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মননা প্রধান করা হচ্ছে। মরহুম হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামলেই পাহাড়ে মহা উন্নয়ন যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমার নির্বাচনী ইশতেহারে এসব তথ্য তুলে ধরা হবে।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী বিভিন্ন দল থেকেও প্রার্থী দেওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, এবার ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নতুন করে জেলার বর্তমান ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা সুস্পর্ট ভাবে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র।