স্টাফ রিপোর্টার:: খাগড়াছড়িতে গত দুই দিনব্যাপী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৬তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর পরিচালিত নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্মেলনে পিসিপি’র আপোষহীন সংগ্রামকে বিকশিত ও গতিশীল করতে হলে নতুন নেতৃত্বকেও গতিশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করে অংগ্য মারমা বলেন, বিগত সময়ে পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত আপোষহীন সংগ্রামের কারণে সরকার ২০১৭ সালে স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে বাধ্য হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে ছাত্র যুবসমাজকে আরো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, ইউনাইটেড ওয়ার্কাস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দপ্তর সম্পাদক সাবিনা চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
বক্তারা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা এবং উত্থান সহজ ছিল না। শাসকগোষ্ঠী ও জাতির দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের নানা প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ তার নীতি আদর্শ সমুন্নত রেখেছে। ১৯৯৭ সালে ‘পার্বত্য চুক্তির’ সন্নিকটে পিসিপি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিপরীতে ছাত্র সমাজের মধ্যে সুবিধাবাদী ও আপোষকামী অংশটি স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করে আপোষ চুক্তির পক্ষে অবস্থান নেয় এবং পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে বিভ্রান্ত, দ্বিধা-বিভক্ত করা হয়েছিল। ফলে ছাত্র সমাজ নানা বিভ্রান্তিতে পড়ে। কিন্তু পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত পিসিপি আবার সাংগঠনিক অবস্থান সুদৃঢ় করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র সমাজকে আরো নতুন দিশা দিতে সক্ষম হয়।
আরো বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বর্তমান নেতৃত্বে নানা দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নতুন নেতৃত্বকে সে সকল দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে তুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে, ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় দমন-পীড়ন, নির্যাতন, অব্যাহত ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। দেশে ক্রিয়াশীল অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে যৌথভাবে জাতীয় বিভিন্ন আন্দোলনে ভূমিকা পালন করছে। পাহাড়ের গণ্ডি পেরিয়ে পিসিপি জাতীয় পর্যায়ে ভাবমূর্তি ও সুনাম অর্জন করেছে। আগামীতেও পিসিপির নেতা-কর্মীকে যোগ্য ও দক্ষ হয়ে জাতীয় গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে।
তিনি বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জনের লক্ষ্যে পিসিপি লড়াই সংগ্রাম করছে এ সংগ্রামে পিসিপি বিজয়ী হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের বিজয় হবে, আর পরাজিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ পরাজিত হবে। তাই এই আপোষহীন মুলধারা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যুক্ত হওয়া সংগ্রামের ও গৌরবের। আজকের ছাত্র সমাজকে আপোষহীন সংগ্রামের ধারা পিসিপি’তে যুক্ত হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে।
২৪ মার্চ সকালে নির্ধারিত ভেন্যুতে পিসিপি’র সভাপতি সুনয়ন চাকমা কর্তৃক দলীয় পতাকা উত্তোলন দিয়ে দু’দিনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল শুরু হয়। এতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য রুপসী চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে ও সারা বিশ্বে নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে দুই মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নিরবতা পালন শেষে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুনয়ন চাকমা দীর্ঘ ১৯ মাস কারান্তরীন থাকার পর সদ্য কারামুক্ত পিসিপির রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রূপায়ন চাকমাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক নানা কার্যক্রম আলোচনা, পর্যালোচনা, সমালোচনা, মতামত, প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনের পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সকল শাখার প্রতিনিধিরা স্ব স্ব এলাকার পরিস্থিতি, সাংগঠনি অবস্থান ও করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরেন ও আলোচনা করেন। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনের কেন্দ্রীয় সকল নেতৃবন্দ স্ব স্ব সাংগঠনিক অবস্থান, দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা ও সফলতা তুলে ধরেন।
কাউন্সিল অধিবেশনে দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশনে কমিটির সকল সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিনিধিদের মাঝে ব্যাখা প্রদান এবং নতুন কমিটি প্রস্তবনা তুলে ধরেন পিসিপি সভাপতি সুনয়ন চাকমা। নতুন প্রস্তাবিত কমিটির ওপরে প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনা পর্যালোচনা শেষে তুমুল করতালির মাধ্যমে কমিটি অনুমোদন করেন। এতে সর্বসম্মতিক্রমে অঙ্কন চাকমা সভাপতি, অমল ত্রিপুরা সাধারণ সম্পাদক ও শুভাশীষ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়।