নুরুল আলম:: পাবর্ত্য খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, দিঘীনালা, গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড়, লক্ষ্মীছড়িসহ প্রতিটি উপজেলা হাট-বাজার,দোকান-ঘরে মোবাইলফোনের বিভিন্ন অ্যাপে এখন চলছে জমজমাট অনলাইন জুয়ার আসর ক্যাসিনো। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে বাংলাদেশের প্রতিটিটি জেলা-উপজেলা চেয়ে গেছে এই অনলাইন জুয়া ক্যাসিনোয়।
অনেকের মতে, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে দেশের বাহিরে টাকা পাচার হচ্ছে। সরকার পরছে তারল্য সংকটে। আর এসব অনলাইন মোবাইল ক্যাসিনোর টাকা লেনদেন হয় বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ,রকেট এমনকি ব্যাংকের মাধ্যমেও টাকা ক্যাশ করার তথ্য রয়েছে। বিষয়টি দ্রত নজরে না আনলে দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে বড় ধরণের বিপর্যয় পড়ার আশংকা রয়েছে।
খাগড়াছড়িতে এই অনলাইন জুয়া ক্যাসিনো খেলে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে কেউ পথে পথে ঘুরছে আর কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, “প্রথমে দুই-তিনজনের টাকা পাবার খবর শুনে আমি ১০ থেকে ২০ আবার ৫০ থেকে ১০০ টাকায় খেলে ১০-২০ গুণ করে ২-৩ বার পেয়ে লোভে পরে এখন আমি সর্বস্ব হারা হয়েছি। সবাইকে বলবো বেশি লোভ করে আমার মতো সর্বস্ব হারাবেন না। লোভে পাপ পাপে মৃত্যু হয়।
দেশজুড়ে আলোচিত ক্যাসিনো অভিযানের দুই বছরের উপরে রাজধানীর ক্লাবগুলো বন্ধ থাকলেও ধরন বদলে
মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে জমজমাট অনলাইন জুয়ার আসর ক্যাসিনো।
একসময় জুয়া খেলতেন এমন ব্যক্তিরাও এই অনলাইন জুয়ার দিকে ঝুঁকছেন। নাইন উইকেটস ডট কম, স্কাইফেয়ার এবং বেট ৩৬৫ সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ জুয়া খেলার জন্য জুয়াড়িদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে জুয়াড়ি প্রথমে তার নিজস্ব একটি ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন। এরপর দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনের মাধ্যমে জুয়ায় অংশ নিতে পারেন।
সূত্র জানায়, ক্যাসিনো কাণ্ডের পর জুয়ার ধরন পাল্টিয়েছে জুয়াড়িরা। একাধিক জুয়াড়ির দেয়া তথ্য মতে গোটা দেশজুড়ে রয়েছে অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক। দেশের মফস্বল পর্যায়ে এখন জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় এই অনলাইন অ্যাপ। যেখানে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রয়েছেন নানা বয়সীরা মানুষ। বিপিএল, আইপিএল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচকে কেন্দ্র করে চলে এই জুয়ার আসর।
সুপার এডমিন সর্বপ্রথম টাকা দিয়ে এই অ্যাপ ক্রয় করে পর্যায়ক্রমে একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। তাদের মধ্যে কেউ সুপার, কেউ মাস্টার এজেন্ট। এ ছাড়া রয়েছে লোকাল এজেন্ট। এক্ষেত্রে নবাগতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আইডি লাগবে মর্মে পোস্ট লিখে থাকেন। পরবর্তীতে জুয়ার মূল নিয়ন্ত্রণ যার হাতে থাকে অর্থাৎ এডমিন একজন এজেন্ট নির্ধারণ করে দিলে তার মাধ্যমে আইডি খুলে শুরু হয় জুয়ার আসর। শর্ত থাকে নির্দিষ্ট এজেন্টের বাইরে তিনি খেলতে পারবেন না। তাহলে আইডি রিজেক্ট হয়ে যাবে। এসব জুয়ার ক্ষেত্রে কয়েন বা রেটিং হিসেবে প্রয়োজন হয় পিবিইউ (পার বেটিং ইউনিট)। যার প্রতিটি ইউনিটের মূল্য এক থেকে দুই’শো টাকা। নিবন্ধন শেষে টাকা দিতে হয় লোকাল এজেন্টকে। সেখান থেকে টাকাটা চলে যায় তাদের মাস্টার এজেন্টের কাছে। পরবর্তী ধাপে সুপার এজেন্টের মাধ্যমে নানা হাত ঘুরে চূড়ান্তভাবে টাকা চলে যায় বিদেশে অবস্থান করা মাস্টারমাইন্ড বা সুপার এডমিনের কাছে।
অনলাইন অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অধিকাংশের বয়স ৩০-এর মধ্যে। অনেকটা মাল্টি পারপাস বা এমএলএম ব্যবসার মতো চক্রের মূল হোতারাই মূলত নিজেদের মধ্যে এজেন্ট তৈরি করে। এ সকল এজেন্টরা আবার সাব এজেন্ট চক্র তৈরি করে। রয়েছে নিজস্ব শেয়ারহোল্ডার। মোবাইলের অ্যাপে থাকা পয়েন্ট বা রেটিংকে তারা কখনো ডলার, পাউন্ড, বিকাশ, ক্ষেত্র বিশেষে নগদ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো কারেন্সিতে ট্রানজেকশন করে থাকে। অসকল অনলাইন বেটিং সাইন বা জুয়ার সাইট বাংলাদেশে বন্ধ না হলে দেশের যুব সমাজ এবং সাধারণ জনগন ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।