নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটি: জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন আয়োজিত “এডভান্সিং ইয়ুথ এক্টিভিজম টু এড্রেস জেন্ডার-বেইসড ভায়োলেন্স” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যৌথভাবে এতে সহায়তা করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ইউএনডিপি, সিআরআই এবং ইয়ং বাংলা।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (আরপিটিআই), মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্যকর্মী, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, সংবাদকর্মী, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও পরিবহন সেক্টরের প্রতিনিধিবৃন্দের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেয়।
কর্মশালার শুরুতেই জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক সাজিদ-বিন-জাহিদ (মিকি) তার সঞ্চালনায় নারীর নিরাপদ অগ্রযাত্রা নিশ্চিতে “উইমেন সেইফটি ইন পাবলিক প্লেস” ক্যাম্পেইনের ভূমিকা তুলে ধরেন। এতে অংশগ্রহণকারীরা গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে নিজ নিজ জায়গা থেকে সমাধান ও প্রস্তাবনা পেশ করেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশ ও ইয়াং বাংলা পরিচালিত ডাব্লিউএসপিপি প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই কর্মশালাটা আয়োজন করা হয়। এই কর্মশালাটির মূল লক্ষ্য ছিলো, নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশেষভাবে নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতে সম্মেলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।
বাংলাদেশের জনস্থানে শতকরা ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশুর যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের ৬৬ শতাংশ জীবনে একবার হলেও এসব স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর ৭ শতাংশ প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন।
জনস্থানে নারীর নিরাপত্তায় ইয়াং বাংলা, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), ইউএনডিপি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশের ২৪ জেলা থেকে ২০৮ জন নারী ও কন্যাশিশুকে নিয়ে ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত অনলাইনে এই সমীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সমীক্ষায় লা হয়েছে, নারী ও কন্যাশিশুরা সব থেকে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন গণপরিবহনে। জরিপে অংশ নেয়া ৩৬ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু বাস, ট্রেন বা লঞ্চে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ২৩ শতাংশ নারী রাস্তা-ঘাটে, ১১ শতাংশ মার্কেট বা শপিং মলে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এসময় অংশগ্রহণকারী সদস্যরা বলেন, জনসমাগম স্থল ও চলার পথকে নারীদের জন্য নিরাপদ করতে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি রোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। একজন নারীর নিরাপত্তা ও চলার পথকে মসৃণ করতে হলে, অবশ্যই উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর নিরাপত্তা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ তরুণ সমাজ ও নাগরিকদের ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা দরকার বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, রাঙামাটি পৌর এলাকাকে নারীর জন্য শতভাগ নিরাপদ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সড়কের দুপাশে সোলার লাইট, ৯টি ওয়ার্ডের পাবলিক টয়লেটগুলোর সংস্কার, নারী বান্ধব ফুটপাত নির্মাণ এবং ভবিষ্যতে বাজারগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে যেখানে কিচেন মার্কেট মূল বাজার থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই বনরূপা কাঁচা বাজারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। “
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক, রাঙামাটি সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম, জেলা অটোরিকশা ও পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মুন্নাসহ স্থানীয় যুব সংগঠনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।