শিরোনাম
বৃহঃ. ডিসে ২৬, ২০২৪

অবৈধ কাঠ পাচার ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল গুলোর সম্পৃক্ততা


নিজস্ব প্রতিবেদক:: বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্য ও বনাঞ্চল রক্ষার স্বার্থে এ অঞ্চলে সবধরনের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেন। যে সমস্ত গাছ কাটার উপযোগী এবং প্রয়োজন তা বন বিভাগ থেকে পারমিট নেওয়ার মাধ্যমে কাটতে হবে। বলাবাহুল্য যে, বন বিভাগ থেকে পারমিট নেওয়ার শর্ত অনেক কঠিন। যা সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। গাছের পারমিটে এই কঠিন শর্ত দেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে যে কেউ যেন গাছ কাটতে না পারেন।

জানা যায়, প্রতিটি অবৈধ কাঠের গাড়ি প্রতি বন বিভাগকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। বড় ধরনের বাগান কাটলে বন বিভাগকে তার দামের ৫% দিতে হয়। এরাও সন্ত্রাসী দল গুলোর মত চাঁদাবাজ। সরকারি আরো অনেক দপ্তর, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অবৈধ কাঠের গাড়ি হইতে চাঁদা নেয়। লেখাটি বিশদ আকারে হয়ে যাবে তাই তাদের সবার নাম উল্লেখ করলাম না। বৈধ ছাড়পত্র দিয়ে সমতলে নেওয়ার কাঠের ট্রাক গুলোতে ৪শত থেকে সাড়ে ৪শত সিপ্টি কাঠের কাগজ পত্র থাকলেও নিচ্ছে ৫শত থেকে সাড়ে ৫শত সিপ্টি। গাছের সাথে কাগজের মিলনেই। বিশেষ করে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চেয়ে রাঙ্গামাটি অঞ্চলে বন উজাড় বেশি হচ্ছে। এখানে সন্ধ্যা নামলেই কাঠ পাচারকারীদের উৎপাত বেড়ে যায়।

এবার মূল কথায় আসি, জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা পরিচালিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘জনসংহতি সমিতি’ (জেএসএস) ও প্রসিত খীসা পরিচালিত’ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ (ইউপিডিএফ) নামক আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর অস্ত্র ক্রয় ও প্রশিক্ষণসহ সাংগঠনিক পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তার মূল উৎস হচ্ছে ‘অবৈধ কাঠ পাচার’। দলগুলো নিজেদের খেয়াল খুশি মত অবৈধ কাঠের পারমিট দিয়ে থাকে। তাদের অনুমতি নিয়ে পাহাড়ের ভিতর থেকে অবৈধভাবে কাঠ আসে।

তাদেরকে গোল কাঠ ট্রাক প্রতি ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। লাকড়ি গাড়ি প্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। গাছের বাগান বিক্রি করলে মোট দামের ১০% দিতে হয়। ইউপিডিএফ এর নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ নেতা জানান, ইউপিডিএফ এর সাংগঠনিক পরিচালনার ৭০% অর্থ আসে কাঠ-বাঁশ থেকে। দলগুলো এখন মানুষ থেকে আগের মত চাঁদা নেওয়ার উপর নির্ভরশীল নয়। এখন বিকাশ এর মাধ্যমে টাকা নিয়ে থাকে।

শুধুমাত্র কাঠ-বাঁশের চাঁদাই সন্ত্রাসী দল গুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যথেষ্ট। একই ঘটনা জেএসএস এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, গুজব ও কুৎসা রটিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সেনাবাহিনী তথা সকল নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক বার্তা দিচ্ছে। যার কারণে নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে সাধারণ মানুষ নেতিবাচক ধারণা পাচ্ছে।

আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল গুলো বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদ কূটনীতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে এবং আত্যাধুনিক অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে প্রতিনিয়ত পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাসহ রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করছে। তাদের এই দেশদ্রোহীতামূলক কর্মকাণ্ডের অর্থনৈতিক যোগান ও অর্থের মূল উৎস হচ্ছে ‘অবৈধ কাঠ পাচার’৷

স্থানীয় জনসাধারণ ও গোয়েন্দাসংস্থা গুলোর দাবি অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ করতে না পারলে উক্ত দলগুলোর অর্থের মূল উৎস বন্ধ করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। তারা চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে বাঙ্গালী, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।

আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল গুলোর লাগাম টেনে ধরতে হলে আপাতত অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ রাখতে হবে। যেহেতু “সরকার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল রক্ষার জন্য কাঠ পাচার নিষিদ্ধ”-সেহেতু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধ কাঠ পাচার রোধ করতে সচেতন থাকতে হবে।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!