নুরুল আলম: সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রে প্রসার (ঞৎধহংভড়ৎসরহম খরঃবৎধপু খবধৎহরহম ঝঢ়ধপবং) এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়িতেও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসকের প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রা বের করা করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে বেলুন বেলুন উড়িয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন।
আলোচনা সভায় অতিথি বক্তারা জানান, সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাই যথেষ্ট নয়, শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। জনসংখ্যাকে যথার্থ অর্থেই সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। এখানে অন্তর্ভুক্তমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা এবং সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষক-সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের কথাও বলা হয়েছে। আশার কথা, আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এনজিও ও সুশীলসমাজ এসডিজির ৪ নম্বর লক্ষ্য নিয়ে নানামুখী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কাজটি সহজ হয়ে যাবে বলা যায়।
সভায় অতিথি বক্তারা বলেন, শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। মানবসভ্যতার চরম উৎকর্ষের এই যুগে এ তথ্যটি নিরাশাব্যঞ্জক যে, সাক্ষরতার হার দিন দিন বাড়লেও বর্তমানে বিশ্বের কয়েক কোটিরও বেশি শিশু-কিশোর স্কুলে যায় না এবং কয়েকটি কোটি মানুষ সাক্ষরতা ও হিসাব-নিকাশে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, শুধু সাক্ষরতা অর্জন নয়, প্রযুক্তিগত জ্ঞানও বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে মানবজাতির জন্য। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। দেশে যতদিন পর্যন্ত একজন নিরক্ষরও থাকবে, ততদিন পর্যন্ত সরকার সাক্ষরতা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা ও নিরক্ষরদের সাক্ষরজ্ঞান দেয়া হবে। আমাদেরও কথা, দেশে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের বিষয়টিকে কোনোক্রমেই হেলাফেলার চোখে দেখা যাবে না। ২০০৯ সালেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প গ্রহণ করেছিল, ২০১৪ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের অনুমোদনও পেয়েছে। ফলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো বাধা নেই। শুধু দরকার, প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলো এগিয়ে নেয়া। প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশের প্রত্যেকে সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হয়ে উঠবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. শানে আলম, খাগড়াছড়ি জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা, জেলা তথ্য অফিসার বাপ্পি চক্রবর্তী, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী, এনজিও সংস্থা আনন্দ’র আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক বিজয় কৃষ্ণ বালা, প্রজেক্ট ম্যানেজার (চঊউচ-৪) আলোক প্রদীপ ত্রিপুরা (বিপন), আনন্দ খাগড়াছড়ি এর ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর রুবেল ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।