নিজস্ব প্রতিবেদক:: দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা প্রত্যাখ্যান করে ন্যূনতম ৩০০ টাকা করার দাবিতে আবারও আন্দোলনে চালিয়ে যাচ্ছেন রামগড় চা বাগানের চা-শ্রমিকেরা। একই সঙ্গে রামগড় চা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, অবৈধভাবে গাছ কাটাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন শ্রমিকেরা।
রামগড় চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটি ও শ্রমিকেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রামগড় চা বাগানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। প্রতি বছর ঘর বাড়ি মেরামত করে দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও বেশ কয়েক বছর মেরামত করা হচ্ছে না। চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং যোগাযোগে ব্যবস্থায় চরম অবহেলা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত রেশনে চাল ও লাল আটার পরিমাণ কম দিচ্ছে এবং যা দিচ্ছে তা খুবই নিম্ন মানের। তা ছাড়াও যোগাযোগের জন্য রাস্তাঘাট ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার এবং যখন-তখন কাজ থেকে ফেরত পাঠানোর মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মদন রাজগড় জানান, চা বাগানে চরম অব্যবস্থাপনার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী। শ্রমিকের ঘামে তারা ফুলেফেঁপে উঠেছে অথচ শ্রমিকেরা না খেয়ে কষ্ট করছেন। চা বাগানে চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই বাজে। প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্র নেয়। বেশির ভাগ সময় বাইরে চিকিৎসা নিতে হয়।
তিনি আরও জানান, বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাজে আচরণ করে। যখন-তখন কাজ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চার বছর আগে দশটি নলকূপ স্থাপন করলেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি নলকূপ গুলোতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, চা বাগানে যে রেশন দেয় তা খুবই নিম্ন মানের। তা ছাড়া পরিমাণেও কম দেয়। ১২০ টাকার মজুরি দিয়ে জীবন যাপন করা খুবই কষ্টকর। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করেন তাঁরা। কখন এক টুকরো মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছে বাগানের অনেক শ্রমিকই মনে করতে পারবে না বলে জানান তিনি।
বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া রামগড় চা বাগানের বিভিন্ন সেকশনের ছায়াবৃক্ষ ও অন্যান্য প্রজাতির গাছ কেটে বাইরে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশ কিছু দিন ধরে পাচার হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ৬টি বৃহৎ আকারের গাছ শ্রমিকদের বিরোধিতার পরও বিক্রির ঘটনায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ জানিয়েছেন। বাগান কর্তৃপক্ষকে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩ ও ২৮ নম্বর সেকশন থেকে অতিসম্প্রতি ৬টি বিশালাকৃতির গাছ বাইরে পাচার হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ বাগানের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গাছ বিক্রিতে জড়িত। শ্রমিকেরা বাধা দিলেও কেউ শুনছেন না তাঁদের কথা।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মদন রাজগড় ও সাবেক সম্পাদক মিন্টু দে বলেন, ‘খবর নিয়ে জেনেছি পাশের হেয়াকো বাজারে ‘মা টিম্বার’ গাছগুলো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কিনেছে। এভাবে প্রতিনিয়তই বাগানের ছায়াবৃক্ষ পাচার হয়।’
ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব আজকের পত্রিকাকে জানান, শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যের কথা তিনি শুনেছেন। শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক। শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার কথা লিখিতভাবে জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে তাদের প্রাপ্য অধিকার পেতে সহায়তা করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বড় গাছগুলো চা বাগানের জন্য ক্ষতিকর। তাই বিক্রি করা হয়েছে, এখন এই জমিতে নতুন বাগান করব।’ শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য এবং অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা নইমুল হোসেন বলেন, ‘বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা ও বাইরে নেওয়া অবৈধ। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’ এদিকে, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে ফেনী-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকেরা।
এদিকে খবর পেয়ে বেলা ১২টার সময় রামগড় চা বাগানের আন্দোলন রত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে ছুটে আসেন ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব। তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির রহমান সানি, ভূজপুর থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন ফারুকী, বাগান বাজার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহাদাত হোসেন সাজুসহ বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।
বাগানের আন্দোলনকারী শান্তা দেবী নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা যে আন্দোলন করছি, সেটা আমরা পেটের দায়ে করছি। ১২০ টাকায় খাওয়া দাওয়া লেখা পড়া কিছুই হয় না। বিভিন্ন ধরনের কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। সরকার বলছে ১২০ টাকায় আমাদের কাজ করতে। আসলেই কী সরকার এই কথা বলেছে। আমরা এটা বিশ্বাস করি না। প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘোষণা দিলে আমরা মেনে নেব।’