নুরুল আলম:: খাগড়াছড়ি জেলার ভাইবোনছড়ার পাকোজ্জ্যাছড়ি গ্রামের পারুল চাকমা নামে এক নারী অভাবের তাড়নায় নিজের কলিজার টুকরা সন্তানকে বাজারে তুললেন বিক্রির জন্য। ছেলের দাম চাইলেন ১২ হাজার টাকা।
শোনা যায়, কয়েকজন দাম হাকান ৫ হাজার পর্যন্ত। এ দৃশ্য দেখে নারীটিকে ছেলে ধরা মনে হলে তাকে আটক করা হয়। পরে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে অভাবের কারণে নিজের ছেলেকে বিক্রি করতে চান।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট ) খাগড়াছড়ির হাটের দিন এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
জানা যায়, পারুল চাকমা বাজারে নিজের ৬ বছরের সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমাকে বিক্রি করতে আসেন। তিনি ছেলের দাম চান ১২ হাজার টাকা। বিষয়টি নজরে আসে কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমার সহধর্মীণিসহ কয়েক জনের। পরে সন্তানসহ পারুল চাকমাকে কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চেয়ারম্যান ওই মাকে বুঝিয়ে পরিবারের কাছে পাঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্যারালাইসিসে আক্রান্ত পারুল চাকমার স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। থাকেন বাবার সংসারে। সেখানেও অভাব। নিজের খাবার জোটে না, সেখানে সন্তানের খাবারের ব্যবস্থা করা কঠিন। তাই সন্তানকে ‘বিক্রির জন্য’ বাজারে তুলেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়ি পড়লে পুরো জেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) পরিবারটির জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে ছুটে যান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা।
এসময় তিনি পরিবারটিকে ৬ মাসের খাবার সামগ্রী, নগদ অর্থ সহায়তা দেন। একই সঙ্গে তাদের একটি সরকারি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তিনি।
বাসন্তী চাকমা এমপি বলেন, ‘এই যুগে এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। বিষয়টি আমি জানার পর তাদের দেখতে এসেছি। মূলত অভাব থেকে এমনটা করেছেন বলে জেনেছি। শিশুটিকে কোনো সরকারি শিশু সদনে পাঠানো যায় কিনা দেখবেন বলে তিনি জানান।’
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোন হদিস না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। পরে জানলাম স্থানীয় জনপ্রতিনিধির হেফাজতে রয়েছে।’
কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা জানান, বিষয়টি জানার পর আমি সন্তানসহ পারুল চাকমাকে অফিসে নিয়ে যায়। পরে পরিবারের জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করা হয়।
ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বিষয়টি দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘পারুল চাকমা নিজে অসুস্থ। তার মধ্যে অভাবের সংসার। এমনিতে অভাব। তাই সন্তানকে মূলত কোনো ভালো পরিবারে দত্তক দেওয়ার জন্য বাজারে নিয়ে গেছে। সেখানে কয়েকজনের কাছে তিনি সন্তানের বিনিময়ে ১২ হাজার টাকা চান। পরে বিষয়টি জেনে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি।’
শিশু রাম কৃষ্ণ চাকমার মা পারুল চাকমা বলেন, ‘ঘরে খাবার নাই। আমার ওষুধ কেনার টাকা নাই। কীভাবে চলবো, কীভাবে বাঁচবো। তাই ছেলেকে ভালো পরিবারে দিতে চেয়েছিলাম।’