নিজস্ব প্রতিবেদক:: রাঙামাটি জেলার রাজস্থলীতে এবার গ্রীষ্মের সুস্বাদু ফল কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। নিয়মমাফিক এখানে চলতি বৈশাখের শেষে পাকতে শুরু করে এই মৌসুমি ফল। উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত সুমিষ্ট কাঁঠালের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। তাই এখানকার কাঁঠালের চাহিদা দেশের অন্য এলাকার তুলনায় একটু বেশি। মাটির উর্বতার কারণে এ অঞ্চলে কাঁঠালের ফলন বেশ ভালো। কাঁঠাল দ্রুত পচনশীল হওয়ায় কোনো কোনো সময় লাভের চেয়ে ক্ষতির অঙ্ক কষতে হয় বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের। এ কারণেই কাঁঠাল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি এ এলাকার কাঁঠাল বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীদের।
রাঙ্গামাটি সদর সংবাদ দাতা এনায়েত উল্লাহ জানান, সরকারি-বেসরকারি কোনো পন্থায় প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় বাগান মালিকেরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ এলাকায় সংরক্ষণাগার স্থাপন করা গেলে কাঁঠাল চাষে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যেতো। কাঁঠাল চাষের আলাদা যন্ত্র ও খরচ না থাকায় অল্প বিনিয়োগ লাভজনক আবাদ হিসেবে সাফল্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকেরা। এ সময় তারা বলেন, বাগানগুলোতে এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হলেও দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে না।
বাগান মালিকেরা বলছেন, উৎপাদিত কাঁঠালের বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কাঁঠাল বাগান মালিকদের গাছে কাঁঠাল ঝুলে রয়েছে। উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে কাঁচা ও পাকা কাঁঠাল উঠতে শুরু করেছে। এখানকার অধিকাংশ কাঁঠাল গাছগুলো বাগানভিত্তিক না হলেও বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার দু’ধারে প্রচুর কাঁঠাল গাছের দেখা মেলে। আর এসব গাছে ঝুলে থাকা কাঁঠালের দৃশ্য অনেকের নজর কাড়ে। চারা লাগানোর পর সাধারণত এর কোন যত্ন নেয়া হয় না। ঝড়ে যাতে ভেঙে না পড়ে তার জন্য বড়জোর একটা খুঁটি ও খাঁচা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঁঠালের চারা আপনা থেকেই বেড়ে ওঠে।
জানা যায়, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁঠাল এলাকার চাহিদাপূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এখানকার কাঁঠাল সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। গত অর্থবছরেও এখানে প্রায় ১৮৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল আবাদ হয়। তার মধ্যে উৎপাদন হয়েছে ৯৮০০ মেট্রিক টন। আর বাজারমূল্য থাকায় তখন এই সুস্বাদু ফল হাসি ফুটিয়েছিল অনেক পরিবারে। যার কারণে এবারও এখানকার কৃষকরা প্রচুর জমিতে কাঁঠাল চাষ করেন। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়িভূমিতে স্থানীয় কৃষকেরা কাঁঠাল ফলিয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলার রাজস্থলীর চুশাক পাড়া, বান্দরবান সাইডের রাজভিলা থ্যাংকালি, ইসলামপুর, শফিপুর, বাঙালহালিয়া, লংগদু পূর্ণবাসনে এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার কয়েক টি গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাগানে কাঁঠাল আকার ভেদে প্রতিটি ৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এবারও তারা কাঁঠালে ১ লক্ষ টাকা লাভের আশা করেছিলেন। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার তিনটি বাজারেই প্রতিবছর সাপ্তাহিক বাজারের দিন প্রায় ৭/ ৮ লক্ষাধিক টাকার কাঁঠাল বেচাকেনা হয়। এসব কাঁঠাল ট্রাক-জিপে করে নিয়ে যাওয়া হতো দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। এলাকার বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত অনেকেই এ মৌসুমে কাঁঠাল ব্যবসা করে কিছু বাড়তি টাকা আয় করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনে । তবে এবার অধিক উৎপাদন হলেও ন্যায্যদাম না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বাগান মালিকদের।