নিজস্ব প্রতিবেদক: রাঙ্গামাটি জেলায় আ”লীগের সম্মেলন রানৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ্ত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ২৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন।
এ সম্মেলনকে ঘিরে পুরো জেলা জুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন ও জল্পনা-কল্পনা। দীর্ঘ দুই যুগের পর শুধু সভাপতি পদ নিয়ে লড়াই হবে এবার। আর প্রায় ১ যুগের পর লড়াই হবে সাধারণ সম্পাদক পদে। গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ায় পরবর্তী সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ২৫ নভেম্বর ২০১৯ সালে। কিন্তু তখনকার সময় নির্ধারিত দিনে কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে না পারায় তা স্থগিত রয়ে যায়।
এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। দলটির বাইরেও বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে শোনা যাচ্ছে নান মন্তব্য। এবার সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটি পদেই তুমুল লড়াই হবে।
উভয় পদে লড়ছেন ২জন করে ৪জন শক্তিশালী প্রার্থী। এর আগের সম্মেলনগুলোতে শুধু সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের সম্মেলনের পর থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় এককভাবে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন দীপংকর তালুকদার। বর্তমানে যিনি রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। তবে ১৯৯৬ সালের সম্মেলনে তীব্র প্রতিদ্বদ্ধিতার মধ্য দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
সেই থেকে র্দীঘ ২৬ বছর পর আবার লড়াই হচ্ছে সভাপতি পদ নিয়ে। পদটির জন্য এবারও লড়বেন দীপংকর। দলের জেলা উপজেলা ও তৃণমূল অনেক নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার সম্মেলনের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে চান অধিকাংশ নেতাকর্মীরা।
তারা ভাঙতে চান একক নেতৃত্বের আধিপত্য। তাই তাদের এখন লক্ষ্য আসন্ন সম্মেলন। সভাপতি পদে বেছে নেওয়া হয়েছে শক্তিশালী প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমাকে। তিনি চ্যালেঞ্জ করে লড়বেন দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে সভাপতি পদে আকঁড়ে থাকা দীপংকর তালুকদার এমপির সঙ্গে। তাই একে অপরকে ঘায়েল করতে প্রত্যেক প্রার্থীর নিজ নিজ নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রার্তীরা এবং তাদের সমর্থক নেতাকর্মীরা বৈঠকের পর বৈঠকজ বসছেন কাউন্সিলরদের সাথে। নাম প্রকাশে না শর্তে দলের অনেক নেতা-কর্মীরা এ প্রতিনিধিকে বলেছেন যে ইতিমধ্যে প্রার্থীরা টাকার বিনিময়ে তাদের দলের ভোটারদের কাছ থেকে ভোট চাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে সভাপতি প্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা বলেন, দলের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের প্রস্তাবের প্রতি সন্মান রেখে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যা ইতিমধ্যে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে। চূড়ান্ত ফলাফল নিধারণের ক্ষমতা দলীয় কাউন্সিলরদের। যা প্রকাশ পাবে আসন্ন সম্মেলনের দিন। জয় নিয়ে আমি দৃঢ় আশাবাদী। কারণ আমার প্রতি নেতাকর্মীদের আগাধ বিশ্বাস, ভালবাসা ও সহানূভূতি রয়েছে এবং তেমনিভাবে আমারও তাদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে বলেছেন নিখিল।
সূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান দায়িত্বে থাকা হাজ্বী মোহাম্মদ মুছা মাতব্বর এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজ্বী মো: কামাল উদ্দিন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। দু’জনেই নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের এবার সম্মেলন কাউন্সিলর হয়েছেন মোট ২৪৬জন। তারাই নিধারর্ণ করবেন জেলা আওয়ামীলীগের আগামীর নেতৃত্ব।
এবারের সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেল. যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্তিত থাকবেন। গত ২১ মার্চ অনুষ্টিত জেলা আওয়ামীলীগের তৃণমূল বর্ধিত সভায় উপস্থিত প্রধান অথিতি দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপিও সম্মেলনের সময়সূচি ঘোষণা করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মুছা মতব্বর বলেন, সম্মেলন হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর। কিন্তু সে সময় প্রস্তুতির একেবারে শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতারা আসতে না পারায় তা স্থগিত করা হয়। পরে দেশে বৈশ্বিক প্রাণঘাতী করোনা মহামাটি বিস্তারে মাঠে ময়দানে যাবতীয় কর্মসূচি বন্ধ থাকায় এতদিন সম্মেলন অনুষ্ঠিানের সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলন সফল করতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে জানান মুসা।