নুরুল আলম:: পাহাড়ে ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছেন প্রকৌশলী সবুজ চাকমা। তার বাড়ি ও অফিস প্রাঙ্গণে ফুলের বাগান পথচারীসহ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে। বৃক্ষপ্রেমী প্রকৌশলী সবুজ চাকমার বাড়ির পাশে গড়ে তোলা নার্সারি দেখাশুনা করেন তার স্ত্রী পান্না চাকমা। কিন্ত ব্যবসার জন্য নয়।নার্সারির লাভের টাকা দিয়ে বৃক্ষরোপন ও বনায়নের জন্য বিনামূল্যে চারা বিতরণ করেন। সবুজ চাকমার অফিস প্রাঙ্গণ আরো চমৎকার। সেখানে ফুটেছে জাভানিকা বা লাল সোনাইল।
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা। তার প্রধান শখ বাগান করা। সে শখ থেকে খাগড়াছড়ি শহরের রাজ্যমনিপাড়া এলাকায় ২০১৯ সালে বাড়ির পাশে ০.৫০ একর ভূমিতে গড়ে তুলেন “ওয়াইল্ড গার্ডেন নার্সারি”। এই নার্সারিটি দেখাশুনা করেন তার স্ত্রী পান্না চাকমা। অবসর পেলে তিনি মাঝে মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়ান। বাগানটি এখন পূর্ণ যৌবনে। সেখানে শোভা পাচ্ছে চন্দ্রপ্রভা, জ্যাকারান্ডা, ডোম্বিয়া, ফুরুশ, রক্তকাঞ্চন, নীলপারুল ও চায়নাহ্যাটসহ অন্তত ৪০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ। খাগড়াছড়ি শহরের রাজ্যমনি পাড়ায় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা “ওয়াইল্ড গার্ডেন নার্সারি”
প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে তার শখ বাগান করা। “ওয়াইল্ড গার্ডেন” নার্সারিটি কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশে করা হয়নি। নার্সারি থেকে ফুল ও চারা বিক্রি করে এ পর্যন্ত যা লাভ হয়েছে সে লাভের টাকা দিয়ে বৃক্ষরোপন ও বনায়নের জন্য বিনামূল্যে চারা বিতরণ করা হয়েছে।’ প্রকৌশলী সবুজ চাকমার অফিসের আঙ্গিনা আরো চমৎকার। সেখাানে ফুলে ফুলে শোভিত হচ্ছে ক্যাশিয়া জাভানিকার বীথি।
প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, ‘তিন বছর আগে খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ক্যাশিয়া জাভানিকার চারা রোপণ করেন। বর্তমানে সে গাছগুলো প্রায় ৫ মিটার উঁচু হয়েছে। ছাতার মতো চারিদিকে ছড়িয়েছে। আর গাছজুড়ে ফুটেছে জাভানিকা বা লাল সোনাইল। গাছটি এখন ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। এ ফুল এখন প্রকৃতি প্রেমিদের মুগ্ধ করছে।’
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা আরো জানান, ‘এ ফুলের গাছটি পাহাড়ে বহু বছর যাবত দেখা যায়। ১৯৯৪ সালে তাদের বাড়ির পাশে একটি গাছ ছিল। যা প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়েছিল। চাকরির সুবাধে খাগড়াছড়ি এসে তিনি এ গাছের চারাটি সংগ্রহ করেন। তিন বছরের ব্যবধানে গাছে ফুল এসেছে। ফুলের রঙ পিংক হওয়াতে দুর থেকে দর্শনার্থীদেরক মুগ্ধ করে। সাধারণত সারাদিন রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় লাগালে ভালো ফুল পাওয়া যায়। ‘অনুসন্ধানে জানা গেছে,ক্যাশিয়া জাভানিকার বৈজ্ঞানিক নাম(ঈধংংরধ লধাধহরপধ) গ্রীষ্মে এ ফুল ফোটে। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার ছাড়াও ইন্দোনেশিয়াসহ উষ্ণ বায়ুমন্ডলীয় এলাকায় এ ফুলের গাছ পাওয়া যায় ও ফুলও ফোটে। এ গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, মাঝারি আকৃতির, ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।’
নিসর্গ বিষয়ক লেখক মোকারম হোসেন এর মতে লাল সোনাইলের ফুল, পাতা ও গাছের গড়ন বেশ নান্দনিক। অল্পবয়সী গাছগুলো দেখতে ছাতার মতো। লাল সোনাইলের পোশাকি নাম পিংক ক্যাশিয়া বা পিংক শাওয়ার। এতদিন কোনো বাংলা নাম ছিল না। লাল সোনাইল নাম রাখেন অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। গড়নের দিক থেকে এরা সোনাইলের মতো, তবে রঙ আলাদা।
তিনি আরো বলেন, ‘শীতকাল এ গাছের পাতা ঝরার মৌসুম। গ্রীস্মের শুরুতে কচিপাতার সঙ্গে গোলাপি রঙের ফুলের ছোট ছোট খাড়া থোকায় ভরে ওঠে গাছ। ফুল প্রায় ৩ সে .মি. চওড়া, সুগন্ধি, পাপড়ি ও পুংকেশর অসমান। বাসি ও তাজা ফুল মিলে চমৎকার বর্ণবৈচিত্র তৈরি করে। ফল গোলাকার, লম্বা, গাঢ়-ধূসর ও শক্ত। এ গাছের বংশ বৃদ্ধি হয় বীজের মাধ্যমে।