আল-মামুন, খাগড়াছড়ি:: আকাঁবাকা পাহাড়ি পথ পেরিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে আলুটিলা পূর্নবাসন গ্রাম। রাস্তা থেকে উঁচু-নিচু পথ। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। মাটিরাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের আওতাধীন এই পাহাড়ি গ্রামে ১৬০ পরিবারের ৩৫৭ জন সদস্য বসবাস আসছিল দীর্ঘদিন ধরে।
পানির এমন অভাবনীয় কষ্টের কথা জেনে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের পক্ষ থেকে সদর জোনের তত্ত্বাবধায়নে খাগড়াছড়ির আলুটিলা পূর্নবাসন ১ ও ২ এলাকাবাসীর জন্য প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ব্যায়ে ১০ হাজার লিটারের ধারণ ক্ষমতার পানির ট্যাংকি, বিদ্যুৎ এর মাধ্যমে পানি সরবরাহে পাম্প ও দীর্ঘ পানির লাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে আলুটিলা পূর্নবাসন প্রকল্প এলাকায় উক্ত পানি সরবরাহের শুভ উদ্বোধন করেন, প্রধান অতিথি খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম,বিএসপি,এনডিসি,পিএসসি। এ সময় খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, পিএসসি, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার (জিটুআই) মেজর মো. জাহিদ হাসান, সদর জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. রিয়াজুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মো. শিহাব উদ্দিন, মাটিরাংগা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেমেন্দ্র ত্রিপুরা,২নং মাটিরাঙ্গা আলুটিলা পূর্নবাসন পাড়ার মেম্বার শান্তিময় ত্রিপুরা,২০৪নং আলুটিলা মৌজার কার্বারী সূর্য কিরন ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে প্রধান অতিথি খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাহাড়ে কোন সন্ত্রাসীর স্থান নেই। তারা শুধু চাঁদাবাজি করে নিজেরা আরাম-আয়েশ করেন। জনকল্যাণ মূখী কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় মানুষের পাশে আছে,ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। এ সময় তিনি,স্থানীয়দের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসীরা স্বল্প সংখ্যক এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা গেলে সন্ত্রাস নির্মূল সম্ভব বলে তিনি জানান।
খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই। তাদের পরিচয় একটাই তারা শুধু সন্ত্রাসী। প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষ কষ্ট করে আর তারা শত কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে বিলাসী জীবন যাপনেই তাদের মুল উদ্দেশ্য। তারা কারো কথা ভাবেনা। সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় দেওয়া হবেনা জানিয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রেখে সাধারন মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
সুপেয় পানি পেয়ে স্বস্থি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। একই সাথে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুরোধ জানান তারা। সেনাবাহিনীর এমন উদ্যোগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
১৯৮৫ সালে নির্মাণ করা হয় খাগড়াছড়ি জেলাধীন পূর্ণবাসন ১ ও ২ প্রকল্প দুটি। জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে আলুটিলা প্রকল্প এলাকায় ১২০টি ও ৪০টি পরিবারের সর্বমোট ১৬০ পরিবারে ৩৫৭ সদস্যের বসবাস। চলতি বছরের মার্চ মাসের ২৫ তারিখে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের দৃষ্টি গোছর হলে দ্রুত সময়ের সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেন সেনাবাহিনী। ফলে দীর্ঘ ৩৭ বছর পর পাহাড়ি গ্রামবাসীর কষ্টের দিনের ইতি টেনে স্বপ্ন পুরণ করলো সেনাবাহিনী। গত ১৮ এপ্রিল পাম্প স্থাপনের কাজ শুরু করে গত ২৯ এপ্রিলে ১২ দিনের মাথায় পাম্প স্থাপনের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়।